এবার ইউএপিএ (Unlawful activity prevention act) আইন প্রয়োগ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। ত্রিপুরার অশান্ত পরিস্থিতির খবর প্রকাশ ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার জন্য সাংবাদিক ও আইনজীবিদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা দায়ের হয়। ৩ জানুয়ারী ওই মামলার শুনানির আগেই কেন্দ্রীয় সরকার ও ত্রিপুরা রাজ্য সরকারকে নোটিশ পাঠালো সুপ্রিম কোর্ট। এই আইন প্রয়োগ কতটা বৈধ? নোটিশে সেই প্রশ্নই জোরালোভাবে রাখা হয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই তৎপর হয়ে উঠেছে ত্রিপুরার বিজেপি সরকার। সাংবাদিক ও আইনজীবিদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলাগুলি খতিয়ে দেখতে ক্রাইম ব্রাঞ্চকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঠিক পরেপরেই ত্রিপুরায় অশান্তির খবর ছড়াতে শুরু করে। ওই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্যাম মীরা সিং ‘ত্রিপুরায় আগুন জ্বলছে’ বলে মন্তব্য রেখেছিলেন। তার ভিত্তিতেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইউএপিএ মামলা দায়ের হয়। শুধু তাই নয়, এই সূত্র ধরে ত্রিপুরায় অশান্তির খবর ছাড়িয়েছেন এমন ১০২ টি ট্যুইটার অ্যাকাউন্টকে শনাক্ত করে মামলা দায়ের করেছিল ত্রিপুরা প্রশাসন। যার মধ্যে অভিযুক্ত হিসেবে ২ জন আইনজীবি মুকেশ গউর ও আনসারুল ইন্দোরি ছিলেন।
এরপরই বাকস্বাধীনতা হরণের পাল্টা অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন সাংবাদিক ও আইনজীবিরা। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি এন ভি রামাণা এবং বিচারপতি সূর্যকান্ত-র ডিভিশন বেঞ্চের শুনানিতে বলা হয়, কোনও মতেই এই ধরনের অভিযোগে সাংবাদিক ও অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করা চলবেনা। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৩ জানুয়ারী। তার আগেই ‘ইউএপিএ’ আইন প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারকে নোটিশ পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট।

এইপ্রসঙ্গে ত্রিপুরার বিরোধী দলগুলো তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী বাধ্য হয়ে মুখ লুকোচ্ছেন। বাংলাদেশের ঘটনার পরে রাজ্যের ঘটনা রুখতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর তা ঢাকতেই সন্ত্রাসবাদ দমনের ওই আইন প্রয়োগ করা হয়েছিল”।
বক্তব্য খুবই পরিস্কার। ত্রিপুরার আসল খবর প্রকাশের ফলে রাজ্যে প্রশাসনের ইমেজ নষ্ট করা রুখতেই অন্যায় ভাবে ইউএপিএ আইনের প্রয়োগ করে কন্ঠরোধ।
যদিও বিজেপি নেতা নবেন্দু ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিতেই পারেন। বিষয়টা পুরোপুরি প্রশাসনের এক্তিয়ারে পড়ে”।
প্রশাসনের এক্তিয়ারে কতটা কি পড়ে, আর মুখ্যমন্ত্রী কেনই বা এই নির্দেশ দিতে পারেন, সেই প্রশ্ন তুলেই এবার বিজ্ঞপ্তি জারি করলেন সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়।