প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রসঙ্গে এবং বিশ্ববাজারে দখলদারির কথা উঠলে চীনের নামটাই আসে, কেননা গোটা বিশ্বে সাপ্লাই চেইন হিসেবে চীনই শীর্ষস্থানে রয়েছে। তাই চীনকি টেক্কা দেওয়া একপ্রকার অসম্ভব বলেই মনে হত। কিন্তু এবার সেই ধারণা বদলাতে চলেছে। প্রযুক্তিগত মেশিনারির ক্ষেত্রে ভারত সরকার এবং কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা যৌথভাবে যে উদ্যোগ নিতে চলেছে তা চীন সহ অন্যান্য দেশকেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে। কারণ একটি অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ যা শুধু চীন এবং হাতে গোনা দুয়েকটি দেশেই তৈরি হয়, সেটা এবার ভারতেও উৎপাদিত হবে।
মনে হওয়া স্বাভাবিক, কী এমন উন্নত মেশিনারির আবিষ্কার করল ভারত, যা কিনা প্রতিযোগিতার বাজারে শুধু অংশীদারিত্ব নয়, অন্যান্যদের টেক্কা দিতে পারে ! এমনকি চীনের সাথেও সরাসরি টক্কর?
হ্যাঁ, উত্তরটা হল সেমিকন্ডাক্টর। ছোট্ট সেলফোন থেকে বিশাল বড় জাহাজ, সবকিছুই তৈরি করতে লাগে এই সেমিকন্ডাক্টর যা একমাত্র চীন, আমেরিকা, তাইওয়ান সহ হাতে গোনা দুয়েকটি দেশই দক্ষভাবে তৈরি করতে পারে। আর সেকারনেই চীনের ওপর ভারত সহ অন্যান্য দেশ নির্ভরশীল।
এবার ভারতের বেসরকারি সংস্থা ‘বেদান্ত গ্রুপ’ সেমিকন্ডাক্টর তৈরির প্রস্তাব রেখেছে। এগিয়ে এসেছে ‘টাটা’-ও। ফলে ভারত সরকার ও বেসরকারি এই দুই সংস্থা যৌথভাবে সেমিকন্ডাক্টর তৈরি ও ব্যবসাগত ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে।
উল্লেখ্য, সেমিকন্ডাক্টর হল ‘বিদ্যুতের অর্ধপরিবাহী’। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জার্মেনিয়াম ও সিলিকন। যেগুলি নিত্যদিনের ব্যবহার্য সবরকমের ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরিতে আবশ্যক। এইমূহুর্তে ভারত সহ বেশকয়েকটি দেশে সেমিকন্ডাক্টর সাপ্লাই করে চীন। যেটা ছাড়া ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি কার্যত অসম্ভব।
সুতরাং বেসরকারি সংস্থা ‘বেদান্ত গ্রুপ’-এর প্রস্তাব একরকম দুর্লভ খনির খোঁজেরই সামিল। এই প্রকল্প সার্থকভাবে রূপায়িত হলে ভারতকে সেমিকন্ডাক্টরের আমদানির জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবেনা তা বলা বাহুল্য, বরং চীনের সাথে পাল্লা দিয়ে ভারতও অন্যান্য দেশে সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি করতে পারবে। আর দেশিয় বাজার তো রয়েছেই। এই মূহুর্তে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন শিল্পে ‘বেদান্ত গ্রুপ’ ৬০ হাজার কোটি এবং ‘টাটা গ্রুপ’ ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে।