বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মারণ রোগ করোনার শেষ পর্যায় হল ওমিক্রন, এমনটাই অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। ২০১৯ সাল থেকে ক্রমশ বিবর্তিত হয়ে, সাম্প্রতিক এই ভ্যারিয়ান্টেই কোভিড তার ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলবে। এই মূহুর্তে দেশবিদেশের বিভিন্ন মহামারী বিশেষজ্ঞদের এটাই মত।
তবে কোভিড সম্পূর্ণ লুপ্ত হবে তা কিন্তু নয়। টিঁকে থাকবে আর পাঁচটা সাধারণ জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসেরই মতো। অতীতের অভিজ্ঞতা এবং ভাইরাসের ক্রম বিবর্তনের ধারায় দেখা গিয়েছে ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, প্লেগ, ইনফ্লুয়েঞ্জা– প্রায় সমস্ত ‘মহামারণ’ অসুখই একটা সময়ে সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে। কোভিডের বিবর্তনও সেইরকম, আর এই ধারায় ওমিক্রনকেই কোভিডের চরমতম রূপ বলে নির্দিষ্ট করতে চাইছেন কিছু বিশেষজ্ঞ। এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত কারণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা এবং মারণ ক্ষমতা একসাথে কখনো বৃদ্ধি পায়না। ভাইরাসের নিজের টিঁকে থাকার প্রয়োজনেই এমন হয়। সাম্প্রতিক অতিতে দুটি মারণ রোগ সার্স ও মার্সএর উদাহরণ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
২০০২ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত ‘সার্স’-এ ভুগেছিলেন প্রায় ৮ হাজার মানুষ , মারা গিয়েছিলেন ৭৮২ জন। আর ২০১২ সালে প্রচন্ড মারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ‘মার্স’ এখনও বজায় থাকলেও, এই রোগের সংক্রমণ ক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে।
উল্লেখ্য, ‘মার্স’এ আক্রান্ত ১,৩৬০ জনের মধ্যে মারা গিয়েছিলেন ৫২২ জন। বিপরীতমুখী এই দুই ধারার আনুপাতিক হিসেবেই বোঝা যাচ্ছে, যে ভাইরাস যত তীব্র মারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হবে ততটা সংক্রামক নয়।
একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোভিড-১৯ গত দুবছরে প্রায় ২৭ কোটি মানুষকে ভোগান্তির পর্যায়ে নিয়ে ফেলেছে। মারা গেছেন প্রায় ৫৪ লাখ মানুষ, অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ২ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে।
ICMRএর মহামারী বিশেষজ্ঞ ড. সমীরণ পান্ডা বলেছেন, “কোভিড-১৯ একটি বিশেষ প্যাটার্ন মেনে চলছে। প্রথম ধাক্কায় কাতারে কাতারে লোকজন সংক্রমিত হল, তাতে মৃত্যু হল কিছু মানুষের। দ্বিতীয় ঢেউ যখন এল তখন মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে, উপরন্তু এসে গিয়েছে ভ্যাকসিন। তৃতীয় ধাপে আরো বিবর্তন। এখন ভাইরাসকে টিঁকেথাকতে হলে খুবই ধীর গতিতে সংক্রামিত হতে হবে।”
ড.পান্ডার বক্তব্যের সূত্র ধরেই কারণটা আরো সহজে বোঝা যায়। বিজ্ঞানসম্মত ধারাতে বেঁচে থাকার জন্যই ভাইরাসের জীবিত মানুষের দেহ প্রয়োজন। তাই সমতা রক্ষা করে, আপোস করে এবার ভাইরাসকে বাঁচতে হবে, মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেই। সুতরাং ওমিক্রনই যে কোভিডের চরম পর্যায়, এমনটা মনে করার কারণ রয়েছে।
SSKM হাসপাতালের রোগ সংক্রমণ বিশেজ্ঞ ড. যোগীরাজ রায়েরও একই বক্তব্য, “মহামারী শেষের পর্যায়ে। তবে মাস্ক পরা, কোভিড বিধি পালন ইত্যাদি জরুরী নিয়মকে জীবনযাপনের অঙ্গ রাখতেই হবে।” তিনি বলছেন, “কোভিড সংক্রমণ বাড়াতে চাইবে, আমাদের কাজ হবে চেইন ভেঙে ফেলা। কারণ সারা দেশে প্রচুর অশক্ত, বয়স্ক এবং কো-মর্বিডিটি সম্পন্ন মানুষ রয়েছেন। সংক্রমণের সামান্য স্পর্শও যাদের পক্ষে বিপজ্জনক।”
তাই সাবধানতা অবলম্বন করেই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে হবে। তবে মহামারী যে ‘লাস্ট স্টেজে’ রয়েছে, এব্যাপারে হোয়াইট হাউসের মুখ্য উপদেষ্টা চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী ড. অ্যান্টনি ফাউসি সহমত পোষণ করছেন। একটি সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে তিনিও জানান,”করোনা সম্পূর্ণ মুছে না গেলেও, আস্তে আস্তে গুরুত্ব হারাবে।”