বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের ভাইরাল অডিও ফাঁস। উঠল তীব্র অভিযোগ। মত্ত অবস্থায় নারী অবমাননা, কুরুচিকর মন্তব্য এবং চলচ্চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহিকে খোলাখুলি ধর্ষণ ও খুনের হুমকি দিয়েছেন তিনি। সরকারের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হয়ে এই জঘন্য কাজ তিনি করলেন কীভাবে? এই প্রশ্ন রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। গতকালই ওই প্রতিমন্ত্রীকে পদত্যাগের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ধারণা করা হচ্ছে যে, বিটিসিএল (Bangladesh Telecommunications Ltd.) মারফত ২ বছর আগেকার এই কল রেকর্ড ফাঁস হয়ে গেছে। আর এই অডিও ফাঁস হয়ে যেতে প্রতিমন্ত্রীর নিন্দা তো বটেই, নায়িকা মাহিয়া মাহিও প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। এই মূহুর্তে স্বামীর সাথে ‘ওমরাহ’ করতে পবিত্র মক্কায় গিয়েছেন তিনি। আর সেখান থেকেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। নিজের পক্ষের সমর্থন করে তিনি বলেছেন, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির ওই অশালীন মন্তব্যের প্রত্যুত্তর দেওয়ার অবস্থায় ছিলেননা তখন, এতটাই ভীত ও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন অভিনেত্রী। তাই এতদিন প্রকাশ্যে একথা জানাতেও পারেননি, তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। তবে মসজিদের সামনে হিজাব পরা অবস্থায় প্রকাশ্যে এই বক্তব্য রাখাটাকেও কিছুটা বাড়তি সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে মুরাদ হাসানের ন্যক্কারজনক ভূমিকা নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহল।

গতকাল রাত ৮টায় মুরাদ হাসানকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লিগের সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী উবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে গণমাধ্যমে তিনি মুরাদ হাসানের পদত্যাগের ঘোষণা গণমাধ্যমেও প্রকাশ করেছেন, জানিয়েছেন — প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশ ২৪ ঘন্টার মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে হবে।
‘সময় টিভি নিউজের’ সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে এই ঘটনাই প্রথম নয়। মঞ্চে নাচগান করে মাতিয়ে বেড়ানো সংস্কৃতি প্রেমী তথ্যমন্ত্রী মুরাদ হাসানের সাংস্কৃতিক রুচিবোধ নিয়ে দ্বিচারিতার প্রশ্ন আগেও উঠেছে। তিনি এর আগেও তিনি খালেদা জিয়ার পুত্রকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে অশালীন উক্তি ছুঁড়েছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির সাথে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের একটি পুরোনো ফোন রেকর্ডিংয়ের অডিও ফাঁস হয়েছে। যে অডিওয় বাংলাদেশের নায়িকা মাহিয়া মাহি, নায়ক ইমন ও বিপরীতে তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান রয়েছেন। এই অডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর সাথে সাথে প্রবল সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সরাসরি কুপ্রস্তাব দেওয়ার সাথে যে ভাষা তিনি একজন সম্মানিত মহিলার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন, তা লোফার ধরনের ছেলেদের মুখের ভাষাকেও হার মানায়।

শুধু তাই নয়, অডিওয় মুরাদ হাসানের কন্ঠস্বরে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে — নায়িকা মাহিয়া মাহিকে রাতেরবেলা হোটেলের স্যুইটরুমে চলে আসতে হুমকি দিচ্ছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী। আসতেই হবে, না এলে তাঁকে “সামনে পেছনে**** রেপ করার” অশালীন উক্তি এবং প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। ওই অডিওতেই নিজেকে “প্রজাতন্ত্রের চাকর” বলে ক্ষমতা জাহির করেই মুরাদ হাসান এইসব নোংরা কথাবার্তা বলেছেন নায়িকা মাহিয়া মাহির উদ্দেশ্যে! যা নারীদের সম্ভ্রমের প্রতি অবমাননাকর তো বটেই, একই সঙ্গে দেশের সংবিধান, রাষ্ট্রের অপমান বলেই মনে করা হচ্ছে। একজন প্রতিমন্ত্রীর পদাধিকারী ব্যক্তির কাছে এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ আচরণ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।
ফেসবুক, ট্যুইটার ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে এমন সব অশ্লীল মন্তব্য প্রকাশ্যে করে চলছিলেন তা নিয়ে সরব হয়ে উঠেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এমনকি প্রকাশ্য ভাবে মুরাদ হাসান ঘোষণাও করেছেন , “আমি মাফ চাই, আপনার যা বলার মনে করার করুন। আমি আমার যা বলার তা বলেই যাবো। আই ডোন্ট কেয়ার!” এই কি এতজন প্রজাতন্ত্রের অধীনস্থ মন্ত্রীর আচরণ?

সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রতিবাদের পাশাপাশি সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিবও। তীব্র ধিক্কার জানিয়ে তিনি মুরাদ হাসানের শাস্তির দাবি তোলেন। আর তারপরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে অবিলম্বে পদত্যাগের আদেশ দিয়েছেন।