বিজেপি দলের কাছে সবচাইতে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন মুকুল রায়। বিজেপির টিকিতে জিতে বিধায়ক শুধু নয়, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (PAC)-র চেয়ারম্যানও তিনি। চলে গেলেন, বলে গেলেননা এই নিয়ে আগেই ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করেও ধরতে পারছেননা মুকুল রায়কে, কেননা অসুস্থ তিনি। যদিও শুরু থেকেই মুকুল রায়ের অসুস্থতা কে ছুতো বলে আসছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু।
প্রথমবার স্পিকার তলব করলে মুকুল রায়ের পারিবারিক তরফ থেকে অসুস্থতার খবর জানিয়ে সময় চাওয়া হয়। সেই সময়ও অতিক্রান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ডাকেও বিধানসভায় গরহাজির ছিলেন মুকুল রায়। স্পিকার সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেননা। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, নিজে না আসতে পারলেও কেন নিজের রাজনৈতিক অবস্থানের কথাটা পরিস্কার করে বলতে পারছেননা মুকুল?

এরপরই মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে পদত্যাগ অথবা পিএসির চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্তের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে বিজেপির তরফে মামলা করা হয়।
হাইকোর্টও বিধানসভাকে নির্দেশ দেন মুকুল রায়ের সমস্যার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিষ্পত্তি করা হোক না হলে কোর্টকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যথারীতি বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও হাইকোর্টের প্রস্তাবেই সম্মতি জানান। এবার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিল হাইকোর্ট। তার মধ্যেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নিতে হবে।
কৃষ্ণনগরের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি মুকুল রায়, তাই পিএসির চেয়ারম্যানও রয়ে গেছেন। কারণ নিয়মানুযায়ী — ওই নির্দিষ্ট পদ (PAC)-এর চেয়ারম্যান বিরোধী দলের প্রতিনিধিকেই নিযুক্ত করা হয়। মুকুল রায় সেই নিয়মের ফাঁদেই বিজেপিকে ফেলে রেখেছেন। কেননা তিনি যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে, অথচ বিরোধী দলের বিধায়কও রয়ে গেছেন।
তাই রাস্তা এখন দুটোই । হয় মুকুলকে ইস্তফা দিতে হবে, যাতে আপনা থেকেই পিএসি চেয়ারম্যান থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া সহজ হয়, আর নাহলে বিজেপিতেই ফিরে আসুন!
রাজ্য বিধানসভার হাজারো দ্বন্দ্বের মধ্যে এই মূহুর্তের বৃহৎ সমস্যা ‘মুকুল দ্বন্দ্ব’ এটাই।

এবার তাই ৭ অক্টোবর অর্থাৎ আগামীকাল সর্বোচ্চ সময় দিল হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ জানিয়ে দিলেন এই সময়ের মধ্যে বিধানসভার স্পিকার ‘মুকুল সমস্যার’ সমাধান করতে না পারলে কোর্ট তার মতো করেই ব্যবস্থা নেবে।
এখানে আরেকটি সাংবিধানিক বাধা রয়েছে।
সংবিধানের ২১২ নম্বর প্যারায় বলা আছে — বিধানসভার অধীনে কোনো মামলা যদি বিচারাধীন হয়, সেখানে বিচারব্যবস্থার হস্তক্ষেপের নিয়ম নেই। কিন্তু বিধানসভা যদি সে মামলা থেকে হাত সরিয়ে নেন তাহলে! কেননা ইতিমধ্যেই বিরক্ত হয়েছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। আইনের পথেই চলতে চেয়ে সায় জানিয়েছেন তিনি।
এখন মুকুল রায় কি আদৌ কোনো সিদ্ধান্ত জানাবেন? আর তা নাহলে কোন ব্যবস্থা নিতে চলেছে হাইকোর্ট ?সেটাই এখন দেখার।