‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’– যেকোনও কৌশলে শত্রুনিধন। মেঘনাদবধ কাব্যের এই চরণটির মতোই নন্দীগ্রামের ভোটচিত্রে অপ্রত্যাশিত ফল ঘটেছিল বিধানসভায়। রামায়ণে বিভীষণের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই, তেমনই তুলনাও এক্ষেত্রে বাহুল্য। সকলেই জানেন, তৃণমূলের উথ্থান ভূমি নন্দীগ্রামেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেছিলেন রণক্ষেত্রে দলবদলকারী, শুভেন্দু অধিকারী।

এই ভোটে কারচুপির দাবি করে পুনর্গননার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সেই বিতর্কিত নন্দীগ্রাম মামলা, সারা পশ্চিমবঙ্গবাসীর নজর যেদিকে তাকিয়ে।
আসলে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল জয়লাভ করলেও, নন্দীগ্রামে মমতার পরাজয় রীতিমতো প্রেস্টিজ ম্যাটার হয়ে দাঁড়ায়। এই ফলাফল ছিল অবাঞ্ছিত ; ঠিক যেমন শুভেন্দুর রঙ বদল ছিল অপ্রত্যাশিত। আর এখানেই রণকৌশলে বড় চালটা দিয়েছিল বিজেপি , রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ তাই মনে করেন। সুতরাং এই মামলার ফলাফল রীতিমতো উৎকন্ঠা জিইয়ে রেখেছিল প্রথম থেকেই।
মামলায় উত্তাপের পারদ আরো চড়তে থাকে, যখন হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের দিকেই মমতা আঙুল তুলে দাঁড়ান। অভিযোগ ছিল বিচারক বিজেপি ঘনিষ্ঠ। ফলে মামলাটি বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চে স্থানান্তরিত হয় ; তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে আদালত।

বিচারপতি বদলানোর ফলে এইবার পাল্টা অভিযোগ করে আঙুল তোলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মত অনুযায়ী উপযুক্ত বিচার মেলা অসম্ভব এই মর্মে অন্য রাজ্যে মামলা স্থানান্তরের আবেদন করেন তিনি। একই সঙ্গে এই মামলা সুপ্রিম কোর্টেও মামলা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন মামলায় হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করবে কিনা সে প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। হাইকোর্টের প্রতি শুভেন্দুর অনাস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। আজ সুপ্রিম কোর্টের শুনানি। সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের দিকেই তাকিয়ে সবাই।