বুধবার রাতের ঘটনা। কাটোয়ার বাইপাসের ধারে এক নাবালিকা তরুণীকে আগ্নেয়াস্ত্র সমেত গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মেয়েটির প্রেমিক তখন গুলি খেয়ে কাতরাচ্ছে। অল্পের জন্য সে বেঁচে যায়। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে একেকটি তথ্য পেয়ে পুলিশও রীতিমতো হয়রান হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে প্রেমিককে গুলি করার অপরাধে (Attempt to murder) গ্রেপ্তার হয়েছিল প্রেমিকা, এবার প্রেমিকারই পাল্টা অভিযোগে প্রেমিককে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।
নেপথ্য কাহিনী খানিকটা এইরকম। একবছর আগে কাটোয়ায় এই নাবালিকা এবং তার প্রেমিক লালচাঁদ শেখের পারিবারিক মতবিরোধ হয়। পরিবার পক্ষের কেউই তাদের বিয়েতে সম্মত হয়নি। সেই ক্ষোভেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে মেয়েটি ঝাড়খন্ড চলে যায় মেয়েটি। সেখানকার একটি নাচের দলে যোগ দিয়ে, বিয়ে অনুষ্ঠান বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছিল এক বছর ধরে।
এদিন হঠাৎ সে ফিরে আসে। ফেলে যাওয়া প্রেম লালচাঁদ শেখকে কাটোয়ার সার্কাস ময়দানে ডেকে পাঠায়। এতদিন পর দেখা, আবেগে জড়িয়ে ধরাই স্বাভাবিক। সম্ভবত তাই হয়। আর এরপরই চুমুু এবং আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি।
লালচাঁদ শেখের বয়ান অনুযায়ী, “প্রথমে আমার গালে একটা চুমু খেল।তারপর বলল দুটো সিগারেট নিয়ে এসো। এরপরই আমার দিকে বন্দুক তাক করে। ওর পিস্তলে একটাই গুলি ছিল।”
বন্দুক থেকে ছোঁড়া গুলি প্রেমিক লালচাঁদের পিঠ ছুঁয়ে জ্যাকেট ছ্যাঁদা করে বেরিয়ে যায়। ওই প্রেমিকাকে ধরার পর গুলি করার কথা নিজেই স্বীকার করে নিয়েছে সে, এবং তার কৃতকর্মের জন্য কোনও আফসোস নেই, বরং তার বক্তব্য ‘যে দোষ করবে সেই মার খাবে।’
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছিল — পণ দেওয়া টাকা নিয়ে দুই পরিবারের ঝামেলা, এবং লালচাঁদের অসম্মতির ফলেই তাদের বিয়ে ভেঙে যায়। তবে প্রেমিক লালচাঁদ জানান,”ওর মা বাবা অন্য জায়গায় বিয়ের ঠিক করেছিল। দুজনে ফোনে কথাও বলত। এই নিয়েই আমাদের ঝগড়া।” আবার নাবালিকা মেয়েটির কাকা আলি হোসেন শেখ নিজের বয়ানে বলেছেন, “ছেলেটা ভালো না। বাবা মাকে নিয়ে আমাদের বাড়িও এসেছিল। কিন্তু আমরা বিয়ে দিইনি।”
সেকারণেই সব ছেড়েছুড়ে ক্ষোভ আর ঘৃণা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে ঝাড়খন্ড চলে যায় লালচাঁদের নাবালিকা প্রেমিকা। মঙ্গলবার ফিরে এই কান্ড। মেয়েটির পরিবার অবশ্য দাবি করেছে, লালচাঁদই ডেকে পাঠিয়েছিল, মেয়ে স্বেচ্ছায় যায়নি।
কিন্তু মেয়ে যে রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কেননা ঝাড়খন্ডে থাকাকালীন একটি ওয়ান শটার পিস্তল ও বুলেট জোগাড় করার বিবরণ সে নিজেমুখেই পুলিশকে জানিয়েছে।
এবার একটা নতুন মোড়। রীতিমতো ড্রামা সিকোয়েন্সকেও যা হার মানায়।
গ্রেপ্তার হওয়া নাবালিকার মা এসে লালচাঁদের বিরুদ্ধে আচমকা ধর্ষণের অভিযোগ তুললেন, সেটাও একবার দুবার নয়, অনেকবার। এমনকি মেয়ের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার খবরও পুলিশের কাছে ফাঁস করে দেন। প্রেমিকের চাপে পড়েই সে গর্ভপাত করায়। কিন্তু এরপরেও বিয়েতে সম্মত হয়নি প্রেমিক লালচাঁদ। সেকারণেই মেয়কে ঝাড়খন্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ফিরে এসে আবারো প্রেমিককে বিয়ের আর্জি জানায় প্রেমিকা। কিন্তু রাজি হয়নি লালচাঁদ, তাতেই প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে মেয়ের বুকে। মেয়ের মা এই বিবরণ দিয়ে আরো জানিয়েছেন, ”লালচাঁদ ধর্ষণ করেছে আমার মেয়েকে। সব জানতে পেরে আমরা ওদের বাড়িতে বিয়ের আবেদন নিয়ে যাই। কিন্তু রাজি হয়নি লালচাঁদ। উল্টে মেয়েটার ছবি স্যোশাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়ে বদনাম করবার চেষ্টা করেছে। সেই রাগ থেকেই ও গুলি মেরেছে।”
কাটোয়া থানার এসডিপিও কৌশিক বসাক জানিয়েছেন,”ধর্ষণ এবং জোর করে গর্ভপাত করানোর অভিযোগে প্রেমিক লালচাঁদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
ছেলের মায়ের মুখে একটাই কথা, “আমার ছেলে গুলিও খেল, আবার গ্রেপ্তারও হল। মেয়ের দোষ ঢাকতে আমার ছেলেকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”