এটা ছিল ৪৯ তম বছর। প্রতিবারের মতোই এবারেও শ্রীভূমির পূজোয় ছিল বিশেষ আকর্ষণ। দুবাইয়ের সবচেয়ে বৃহত্তম বাড়ি ‘বুর্জ খলিফা’-র হুবহু আদলে তৈরি হয়েছিল এবারের পূজোমন্ডপ। নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে কাচ ও অ্যালুমিনিয়াম। কিন্তু সপ্তমী থেকেই নানা অভিযোগে দেখা দেয় বিভ্রাট। প্রথমে বন্ধ করা হয় আকর্ষণীয় লেজার রশ্মির আলোর খেলা। আর আজকের ঘটনার জেরে অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হল প্রশাসন।

ভিআইপি রোড সংলগ্ন শ্রীভূমির পূজো বিখ্যাত সেই বাম আমল থেকেই। একদা সুভাষ চক্রবর্তীর পূজো বলে খ্যাত হলেও পরিচালন ভার সমস্তই ছিল সুজিত বসুর দায়িত্বে। সুজিত বসু এখন তৃণমূলে, তিনি দমকল মন্ত্রী। আগাগোড়া এই পূজো সুজিত বসুর দুর্গাপূজো বলেই পরিচিত। ফলে রঙ বদলালেও মেজাজ বদলায়নি কলকাতার সেরা পূজোর তালিকায় থাকা শ্রীভূমি।
এবারের থিমটা শুরু থেকেই ছিল আকর্ষণীয়। দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার আদলে বানাদো ১৪৫ ফুটের এই বিশাল মন্ডপের প্রচারও ব্যাপক হয়েছিল তেমনই। এতটাই জনপ্রিয়তা যে, এয়ারপোর্টগামী বেশ কিছু বাসে পোস্টার পর্যন্ত সাঁটানো হয়েছিল –“বুর্জ খলিফা যাইবে, শ্রীভূমী যাইবে”। ফলে বিধি নিষেধের বাঁধ ভেঙে দলে দলে ‘বুর্জ খলিফা’ দেখতে ছুটছিল হাজার হাজার মানুষ– সেই ষষ্ঠী থেকেই।

তবে সপ্তমীর দিন শ্রীভূমির পূজোয় প্রথম বাধার সূত্রপাত হয়। দুবাইয়ের উচ্চতম ‘বুর্জ খলিফা’ থেকে ঝিকিয়ে ওঠা আকাশ ছোঁয়া লেজার আলোর ফলে বিমান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে ‘এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনজন পাইলট। নিয়ম অনুযায়ী এয়ারপোর্টের কাছাকাছি এলাকায় লেজার আলো বা ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ, ফলে অষ্টমীতে লেজার আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়।
আলোর খেলা বন্ধ হবার পরেও অবশ্য ‘বুর্জ খলিফা’-র আকর্ষণ কমেনি। বিকেল ৫:৩০ এর পর থেকেই কাতারে কাতারে লোক জড়ো হচ্ছিলেন। করোনা বিধি, দুর্যোগের পূর্বাভাস সমস্ত অগ্রাহ্য করে বুর্জ খলিফার উদ্দেশ্যে ছুটছিল জনস্রোত। ‘বুর্জ খলিফা’ দেখতে মরিয়া হয়ে ছুটছিল আমজনতার ঢল।

মন্ত্রী সুজিত বসু নিজেমুখেই স্বীকার করেছিলেন, “এবার কলকাতার সমস্ত জায়গার চেয়ে ভিড়টা এখানেই বেশি হয়েছে”। পাশাপাশি সতর্কবার্তাও জানাচ্ছিলেন –“মানুষকে বলবো তাড়াহুড়ো করবেননা! কোভিড বিধি মেনে, সতর্কতা মেনে, ধীরে ধীরে ঠাকুর দর্শন করুন”।
কিন্তু এই সতর্ক বার্তা শেষপর্যন্ত কাজে লাগলোনা।
অষ্টমীর রাত বাড়তেই দেখা গেল ভিড় চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কার্যত ওই বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় সামলানো ভলান্টিয়ার ও প্রসাশনের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বাধ্য হয়েই সাময়িক ভাবে শ্রীভূমির পূজোয় দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফাঁকা পূজো এলাকা এখন কড়া পুলিশি নজরদারির অধীনে।