‘নিরামিষ’ শব্দটা নিয়ে অনেকের মনেই দ্বন্দ্ব কাজ করে। কারণ সম্পূর্ণ নিরামিষভোজী যারা, একেবারে ছোটবেলা থেকেই আমিষে অনভ্যস্ত তাদের কাছে শব্দটা সাধারণের চেয়ে ব্যাপক অর্থ ধারণ করে। তার ওপর যদি এর সাথে ধার্মিক আচার যুক্ত থাকে তাহলে ‘নিরামিষ’ শব্দটা সংস্কার ও ধর্মীয় আবেগের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত হয়ে যায়। আর এমন কোনো ব্যক্তি যদি নিরামিষ খাবার খেতে গিয়ে তার মধ্যে আমিষ খুঁজে পান, এর প্রতিক্রিয়া চরম হওয়াই স্বাভাবিক। ঠিক সেই ঘটনাই ঘটল ফকির ঘোষ লেনের অপূর্ব কক্করের সাথে। খাবার দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন ভদ্রলোক।
আশৈশব নিরামিষাশী অপূর্ব কক্কর ১১ তারিখে কলকাতার একটি চালু রেস্তোরাঁ ফ্রাইডে ক্যাফে থেকে অ্যাপ মারফত অনলাইন খাবার অর্ডার করেছিলেন। মেনুতে ছিল ভেজিটেরিয়ান ফার্মহাউস পিৎজা ও গ্রিলড ভেজ পেস্টো স্যান্ডউইচ। খাবার খেতে গিয়ে তিনি দেখলেন পিৎজা ঠিকঠাক হলেও, স্যান্ডউইচটি আমিষ! এমনকি চিকেন রয়েছে তাতে।
এপ্রসঙ্গে অপূর্ব কক্কর জানান, “আমাদের পরিবার পঞ্জাবি হলেও প্রাণীহত্যার বিপক্ষে। আমিষ এবং মদ আমরা স্পর্শ করিনা। ছেলেবেলা থেকে হিন্দু ধর্মের সমস্ত আচার মেনে চলি। হনুমান পূজা, নবরাত্রি, সত্যনারায়ণ পূজা করি।”
এহেন কট্টর আচারবিধি পালনকারী ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই ফ্রাইডে ক্যাফে রেস্টুরেন্টের হালকা মনোভাব দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ‘আমার ধর্মীয় আবেগে আঘাত করা হয়েছে, মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হয়েছে’ এমনই প্রতিক্রিয়া অপূর্বর।
রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সেদিনই যোগাযোগ করে জানান অপূর্ব। রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ভুলের কথা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিরামিষ স্যান্ডউইচ পাঠাবার প্রস্তাব দিলেও তা সহজে মেনে নিতে রাজি হননি অপূর্ব কক্কর। তিনি কনজিউমার ফোরামের মারফত রেস্টুরেন্ট মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করেন। এরপরেই ঘটনাটা অন্যদিকে মোড় নেয়।
অপূর্ব বলেন, “এরপর ওই রেস্তরাঁর মালিক আমার সঙ্গে দেখা করবার জন্য জোর করতে থাকে। ১৫ ডিসেম্বর আমি ওঁর সাথে দেখা করি। উনি আমায় রীতিমতো হুমকি দেন। আমি কোথায় কাজ করি ইত্যাদি সব তিনি জানেন। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সব মেটাতে চেয়ে উনি শুধু আমার ধর্মীয় নন আর্থিক অবস্থাকেও অপমান করেছেন।”
ফুড ডেলিভারি অ্যাপের সাথে যোগাযোগ করেও কোনওরকম সুরাহা হয়নি। অপূর্ব কক্কর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩৯৩ টাকাই শুধু ফেরত পেয়েছেন। এমনটাই জানান তিনি।