কেন্দ্রের তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সম্প্রতি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন উত্তর প্রদেশের যোগী সরকারের আমলে উত্তরপ্রদেশে নাকি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যুবকদের কর্মসংস্থান, শিক্ষার সুযোগ ইত্যাদি বর্ণনা করার পাশাপাশি অপরাধ দমনে আদিত্যনাথ যোগীকে এককথায় প্রশংসা পত্র ধরিয়ে দিয়েছেন তিনি। অথচ তথ্য বলছে উল্টো কথা। শিশু পাচার, গণধর্ষণের ঘটনা লাগাতার জারিই রয়েছে উত্তরপ্রদেশে!

গত মাসে আদিত্যনাথ যোগী সরকারের দেওয়া রিপোর্টেই বলা হয়েছে উত্তরপ্রদেশে গড়ে ৫ জন করে শিশু নিখোঁজ হয়, যার মধ্যে অন্তত ৩ জন বালিকা! যেখানে হাথরসের মতো নৃশংস ভাবে দলিত কন্যাকে গণধর্ষণ করে খুন এবং প্রমাণ সরিয়ে দিতে লাশ লোপাট করতে আইনি ব্যবস্থাই সাহায্য করে বলে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর যোগী-রাজ্য উত্তরপ্রদেশকে ‘ক্রাইম ফ্রি রাজ্য’ বলে ক্লিনচিট দিলেন কীভাবে?
উল্লেখ্য, গোরক্ষপুরের একটি অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্যুটিং রেঞ্জ ও স্টেডিয়াম তৈরির আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর আদিত্যনাথ যোগী সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, “লুঠপাট খুন ধর্ষণের ঘটনা আগে লেগেই থাকত। কিন্তু যোগীজি আসার পর থেকে সেই ভয় সন্ত্রাসের চেহারা একেবারে উধাও। একজন সন্ন্যাসী যিনি নাথপীঠ থেকে এসেছিলেন তিনি সব অপরাধের অবসান ঘটালেন। দুষ্কৃতীদের উপযুক্ত জায়গায় পাঠিয়ে দিলেন।”
সন্ন্যাসী যোগীজি দুষ্কৃতীদের উপযুক্ত জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছেন! হ্যাঁ তাই বৈকি! সেকারণেই কি হাথরসের গণধর্ষিতার পরিবার নৃশংস ঘটনার এক বছর পরেও আদালতে যেতে ভয় পান?

হাথরসের কেসফাইল উইপোকা কাটবার সময় নাহয় ঘনিয়ে এল। শুধু একা মনীষাই তো নয়! দেশজুড়ে মনীষার নৃশংস মৃত্যুর প্রতিবাদ চলাকালীনই বলরামপুরে আরো এক ২২ বয়সের তরুনী গণধর্ষণের শিকার হন, ইঞ্জেকশান প্রয়োগ করে অজ্ঞান অবস্থায় পাশবিক নির্যাতন করে তার পা ভেঙে ফেলে দেওয়া হয়। ওই কেসে বলরামপুরের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট রঞ্জন বর্মা বলেছিলেন,”কাজে বেরিয়ে বাড়ি ফেরেননি ওই তরুনী। শেষরাতে একটা রিক্সা তাকে বাাড়িতে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যায়।” বয়ানটা আরেকটু বিস্তারিত করে বললে যা দাঁড়ায় — হাতে ইঞ্জেকশানের সিরিঞ্জ লাগানো অবস্থায় মেয়েটির পাভাঙা ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহটি ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ ফিরেছিল। আর অপরাধীরা ? তাদের কোন ‘উপযুক্ত’ স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হল তা কে জানে?
‘ক্রাইম ফ্রি রাজ্যের’ চেহারাটা আরেকটু প্রকাশ করতে তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সামনে আরো তথ্য পেশ করা যায়। শিশু অধিকার রক্ষাকর্মী নরেশ পারসের RTI রিপোর্ট অনুয়ায়ী–‘২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে কম করে ১ হাজার ৭৬৩ জন শিশু নিখোঁজ হয়েছে। তবে এটা শুধুমাত্র ৫০ টি জেলার হিসেব। বারাণসী, গোরখপুর, বরেলির মতো ২৫ টি জেলা যোগ করলে সংখ্যাটা আরো বাড়বে।’
এটাই কি তাহলে ক্রাইম ফ্রি রাজ্যের উদাহরণ?
