কিছুদিন আগেই জয়পুরের সভামঞ্চ কাঁপিয়েছেন, আজ আবার মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে মিছিলে নেমেও হিন্দুত্ববাদ ও হিন্দু প্রসঙ্গে দ্বিগুণ আক্রমণাত্মক ভঙ্গি নিয়েই নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করলেন রাহুল গান্ধী।
গান্ধী পরিবারের ঘাঁটি বলে পরিচিত অমেঠীতে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে এক মিছিল আয়োজিত হয়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বিদ্ধ করতে তাঁদের হিন্দুত্ববাদকেই আবার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিলেন সনিয়া পুত্র রাহুল। অমেঠীর প্রতিবাদ সভায় প্রধানমন্ত্রীর গঙ্গাস্নানকে ইঙ্গিত করে রাহুল গান্ধী বলেন, “হিন্দুত্ববাদী একা গঙ্গায় স্নান করেন, হিন্দুরা কোটি কোটি মানুষ একসাথে গঙ্গায় স্নান করেন। হিন্দুরা সত্যাগ্রহ -র পক্ষে। আর হিন্দুত্ববাদীরা ক্ষমতা বা সত্তার জন্য ‘সত্তাগ্রহ’ করেন। হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদীদের ফারাক হল– একদিকে সত্য অন্যদিকে মিথ্যা, একদিকে ভালবাসা অন্যদিকে হিংসা, একদিকে মহাত্মা গান্ধী অন্যদিকে নাথুরাম গডসে।”
মূলত উত্তরপ্রদেশের আসন্ন নির্বাচন লক্ষ্য করেই রাহুল প্রিয়াঙ্কার একসাথে পদযাত্রা। প্রতিবাদের অ্যাজেন্ডা যদিও বেকারি, মূল্যবৃদ্ধির মতো জনসাধারণের সমস্যা। কিন্তু সেখানেও কেন ‘হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদ’ প্রসঙ্গ টেনে আনছেন রাহুল গান্ধী! এর ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে বলেই কংগ্রেস শিবিরের একাংশ মনে করছেন। তাঁরা সংশয় প্রকাশ করছেন, সাধারণ মানুষ কি আদৌ হিন্দু এবং হিন্দুত্ববাদী আরএসএস বিজেপির তফাৎ বুঝবে?
রাহুল গান্ধীর অনুগামীরা অবশ্য মনে করছেন এই পন্থাই সঠিক। কেননা, যে হিন্দুত্ববাদকে সামনে রেখে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে চাইছে বিজেপি-আরএসএস, তার ভিত্তিমূলে আঘাত না করলে বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের কোনও সমস্যারই মীমাংসা করা যাবেনা। কেননা সব সমস্যা আড়াল করতেই বিজেপি ‘হিন্দুত্ববাদ’ দিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি করতে চাইছে। তাই সরাসরি মূল লক্ষ্য হিন্দুত্ববাদকেই আঘাত।
এরসঙ্গে অবশ্য দৈনন্দিন সমস্যার কথাও রাহুল গান্ধীর বক্তব্যে উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন,”মোদীজি বলেন তিনি হিন্দু। কিন্তু তিনি সত্যের রক্ষা করতে পেরেছেন কি? প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বছরে দুকোটি চাকরি হবে, হয়নি। বলেছিলেন থালা বাজালে করোনা চলে যাবে, যায়নি। তাহলে তিনি কি হিন্দু না হিন্দুত্ববাদী?” রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী যে গঙ্গাস্নান দেখিয়েই বেকারি, মূল্যবৃদ্ধির মতো সমস্যাকে আড়াল করছেন সেই ইঙ্গিত করেই এক সুরে সুর মিলিয়েছেন প্রিয়াঙ্কাও। এদিনের সভায় তিনি বলেন,”ধর্মবিশ্বাস সবারই থাকে। কেউ তা দেখায়না। ধর্মবিশ্বাসকে স্বার্থে কাজে লাগায়না। প্রধানমন্ত্রী তাই করছেন।”
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানির কাছে পরাজিত রাহুল দ্বিতীয়বার অমেঠীতে এলেন। অমেঠীর জনগণকে উদ্দেশ্য করে এদিনের সভায় বক্তব্য রাখতে দেখে অনেকেই অনুমান করছেন, ২০২৪-এর নির্বাচনেও কি অমেঠীতেই প্রার্থী হবেন রাহুল গান্ধী!