ধর্ম সংসদের বিতর্কিত ভিডিও সোশ্যাল মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই উত্তরাখণ্ডে আগুন লাগানো হাওয়া উঠেছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণাত্মক ভাষা প্রয়োগ দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছে সামাজিক ও রাজনৈতিক মহল। তারই মধ্যে সেই আগুনে ঘি ঢাললেন স্বামী আনন্দস্বরূপ। সংবাদ মাধ্যমে একরকম খোলাখুলি স্বীকার করেই নিলেন এই ভিডিওর সত্যতার কথা, পাশাপাশি তিনি নিজেও একাধিক হিংসা উদ্রেককারী মন্তব্য করলেন প্রকাশ্যেই!
“ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবেনা” এই জোরালো দাবি তুলে একটি সংবাদ মাধ্যমে স্বামী আনন্দস্বরূপ বলেন, “আমরা আমাদের দাবিতে অটল রয়েছি যা একেবারে সুচিন্তিত। কেউ যদি আমাদের বোনকে ধর্ষণ করে আমরা কি তাকে হত্যা করবনা? বক্তারা এমন ব্যক্তিদেরই হত্যা করার কথা বলেছেন, সাধারণ মুসলমান যারা আমাদের বন্ধু তাদের নয়।”
স্বামী আনন্দস্বরূপের এই বক্তব্যেই পরিস্কার, ধর্ম সংসদের যে হিংসাত্মক বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মাধ্যমে ছড়িয়েছে তা অভ্রান্ত সত্যি। একই সঙ্গে ভারতের কিছু সচেতন মানুষ স্বামী আনন্দস্বরূপজি-র কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘মুসলমান হওয়ার সাথে ধর্ষণকারীর সম্পর্ক কোথায়? কোনও হিন্দু কি কখনও ধর্ষণ, খুন ইত্যাদি জঘন্য অপরাধ করেনি? যদি টার্গেট তাঁরাই হয়ে থাকে, তাহলে মুসলমান সম্প্রদায়ের উল্লেখ কেন? তাছাড়াও, ‘উত্তরাখণ্ডের যে হোটেলে বড়দিন পালিত হবে সেখানেই ভাঙচুর করা হবে’ এই ধরনের বক্তব্যই বা কাদের উদ্দেশ্যে?
উল্লেখ্য, ১৭-১৯ ডিসেম্বরের এই সভায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগীও উপস্থিত ছিলেন, এমন ছবিও প্রকাশিত হয়েছে (যদিও এই ছবি সংবাদ মাধ্যমের যাচাইকৃত নয়)।
তবে ধর্ম সংসদের মূল প্রবক্তা স্বামী নরসিহানন্দ ধর্মীয় উস্কানিমূলক হিংসার কারণে পুলিশের সাসপেক্ট হিসেবে রয়েছেন, এই তথ্য ইতিমধ্যেই সকলে জেনেছেন। তাঁর আহ্বান করা এই সভায় একাধিক বক্তার মুসলিম নিধনে অস্ত্র তুলে নেওয়া, ভাঙচুর ইত্যাদি মন্তব্যের পাশাপাশি স্বামী প্রবোধানন্দ তাঁর বক্তব্যে বলেছেন , “প্রত্যেক হিন্দু রাজনীতিক ও পুলিশকে অস্ত্র তুলে নিতে হবে। সাফাই অভিযান শুরু করতে হবে।”
আরো একটি ভিডিওতে শোনা গিয়েছে, স্বামী ধরমরাজ মহারাজ বলছেন, “প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যেদিন সংসদে দাঁড়িয়ে জাতীয় সম্পদের ওপর সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা বলেছিলেন, আমি তখন সেখানে উপস্থিত থাকলে তাঁকে গুলি করে মারতাম। রিভলবারের ছটা গুলিই তাঁর বুকে ঢুকিয়ে দিতাম। আমাদের প্রত্যেকের নাথুরাম গডসে হওয়া উচিত।”
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কোন সংগত কারণ দেখাবেন স্বামী আনন্দস্বরূপ? প্রশ্ন উঠেছে। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই গোটা বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, ‘এই ধরনের ঘটনা সংবিধান বিরোধী। যারা এভাবে হিংসা ছড়াচ্ছেন, অবিলম্বে তাদের কঠোর শাস্তির’ দাবি তুলেছেন তিনি।
একইসাথে বলেছেন,”আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে খুন করার কথা বলেও তারা সহজে ছাড় পেয়ে যাবে, এটা লজ্জাজনক।” পাশাপাশি প্রতিবাদে সামিল হয়েছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস।

হরিদ্বারের তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র সাকেত গোখলে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সরাসরি বলেছেন “নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপির ইন্ধনেই এইধরণের সভা হয়েছে।”এই ঘৃণ্য ধর্মসভার আয়োজকদের” বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন তিনি।