তিনি ফুরুফুরা শরিফের পীরজাদা। তিনি হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে- আদিবাসী, দলিত শ্রেণীর হয়ে লড়েন, তিনি ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকী।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ধর্মীয় হিংসা ও মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে উত্তাল দুই দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোষীদের কঠোর শাস্তির নির্দেশ দিলেও, এপার বাংলায় অশান্তির বাতাবরণ স্তিমিত হচ্ছেনা কিছুতেই। তৃণমূল-বিজেপির মতো রাজনৈতিক দল পরস্পরকে অভিযোগেই ব্যস্ত। সংখ্যালঘু হিন্দুদের পক্ষ নেওয়ার নামে ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদী’রা সুযোগ বুঝে ক্ষমতার প্রসার বাড়ানোর চেষ্টায়। যদিও সিপিআইএমের পলিটব্যুরো সদস্য সুজন চক্রবর্তী লিখিত বিবৃতিতে হিংসার প্রতিবাদ করেছেন।
ঠিক এই সময়েই শোনা গেল ‘ভাইজানের’ কন্ঠস্বর। বাম-কংগ্রেস জোটের অন্যতম শরিক আইএসএফের প্রতিষ্ঠাতা নেতা আব্বাস সিদ্দিকী বললেন, “অপরাধীদের কোনো ধর্ম হয়না। কোনও প্রকৃত ধার্মিক অন্যের ধর্মকে ঘৃণা করেনা। সমস্ত ধর্মই সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয় বলে আমি মনে করি”।
ধর্মের জিগির তুলে মৌলবাদী চক্রান্ত যখন মাথা তুলতে চাইছে ঠিক তখনই ‘পরধর্মসহিষ্ণুতার’ বাণী মনে করিয়ে দিলেন আইএসএফের এই যুবনেতা। উল্লেখ্য, ফুরফুরা শরিফ-এর পক্ষ থেকেও হিন্দু মূর্তি ভাঙা ও হিংসা ছড়ানোর তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বঙ্গ রাজনীতিতে আব্বাস সিদ্দিকীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। কে এই আব্বাস সিদ্দিকী? লোকমুখে ‘ভাইজান’ বলে পরিচিত আব্বাস সম্পর্কে একনজরে কিছু জেনে নেওয়া যাক।
ইনি ফুরফুরা শরিফের এক পীর বংশের সন্তান। পীর আলি আকবরের এই পুত্র আব্বাস ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কাজেকর্মে উৎসাহী ছিলেন। জাত ধর্ম নির্বিশেষে বন্ধুদের বিপদে আপদে পাশে পাওয়া যেত আব্বাসকে। আলিয়া ইউনিভার্সিটির ফুরফুরা টাইটেল মাদ্রাসার স্টাডি সেন্টার থেকে থিওলজিতে এম.এ করেছেন তিনি। বলিয়ে কইয়ে ছেলে হওয়ায় অল্প বয়স থেকেই নানান ধর্মীয় সভাগুলোয় ডাক পড়ত আব্বাসের। এইসব বক্তৃতা থেকেই তার মধ্যে প্রকৃত ধর্মচেতনা ও যুবসমাজকে প্রাণিত করে তোলার আভাস পাওয়া যায়। জনপ্রীতিও বাড়তে থাকে।
২০১৬ সালে ‘ফুরফুরা শরিফ আহলে সুন্নাতুল জামাত ‘ নামে এক সামাজিক সংগঠন তৈরি করে সামাজিক কাজকর্মে অংশ নিতে শুরু করেন। মুসলিম সহ হিন্দু দলিত শ্রেণী ও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের কন্ঠস্বর হয়ে ওঠেন তখন থেকেই। ২০১৯ সালে সিএএ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সময়ে রাজনীতির মঞ্চে প্রতিবাদে নামেন এই জননেতা। প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’। গত বিধানসভায় বাম-কংগ্রেস জোট শরিক হয়ে লড়ে আব্বাসের দল।
সেই ‘ভাইজান’ আব্বাস সিদ্দিকীই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার পক্ষে সরব হয়েছেন। শুধু তাই নয় লিখিত বিবৃতি দিয়ে তিনি দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করলেন। হিন্দুদের দেবদেবী ভাঙার তীব্র নিন্দার পাশাপাশি ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার আর্জি জানিয়েছেন মানবতার কাছে।