‘ইঞ্জিনিয়ার’ ছিলেন রাম! তিনি কি সেটা জানতেন স্বয়ং ? না, সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা। সকলেই আমরা কম বেশি জানি, ভারতের আয়ুর্বেদ বহু প্রাচীন। জানা আছে চরক – শুশ্রুতের কথাও। শল্য চিকিৎসা যে প্রাচীন ভারতেও উন্নতিলাভ করেছিল অস্বীকার করা যায়না । তাই বলে তাকে কি অত্যাধুনিক ‘মাইক্রোসার্জারি’র সাথে তুলনা করা যায়!
‘রামচন্দ্র ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন ‘ কথাটাও অনেকটা যেন তেমনই শোনায়। আর মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার ঠিক সেই তুলনাই করছেন –বিরোধীদের তাই মত। তুলনা তারা যেমন খুশি করতেই পারেন। কিন্তু তাকে ছাত্র ছাত্রীদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করাটা মানতে পারছেননা বিরোধীরা।
কী ভাবছেন, নতুন করে আবার কী হল?
কিছুই না সেই পুরোনো কাসুন্দিকেই নতুন বোতলে ভরে লেবেল সেঁটে প্রচারের দায়িত্ব নিল মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রক। তবে এবারের নতুন প্রয়াসটা বেশ অভিনব। রামসেতু প্রসঙ্গকে গায়ের জোরেই ঐতিহাসিক তকমা দিয়ে কলেজের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হল।
মধ্যপ্রদেশের প্রত্যেকটি কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ানো হবে এই বিষয়। কম্পালসারি হিসেবে ছেলেমেয়েদের পড়তে হবে মহাভারত ও রামচরিত মানস।
পড়া তো অবশ্যই উচিত। প্রাচীন ভারতের মহাকাব্যের আস্বাদ নেওয়াই উচিত ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু প্রশ্ন হল, মহাকাব্যিক আখ্যানের স্বাদ নেওয়ার জন্যই কি সেগুলো পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। নাকি অন্য উদ্দেশ্যে! কেননা উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী বলেছেন,”আমরা ছেলেমেয়েদের শুধু শিক্ষিতই করবোনা, তাদের চরিত্রও গড়ে দেবো”।
আর এখানেই গন্ধ খুৃঁজে পাচ্ছেন বিরোধীরা। জনৈক কংগ্রেস বিধায়ক প্রশ্ন তুলছেন,”চরিত্রই যদি গড়তে হয় তাহলে কোরান, বাইবেল বা গ্রন্থসাহেব কী দোষ করল?”
ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিটাও কি চরিত্র গঠনে জরুরি নয়? শুধুমাত্র হিন্দুধর্মেই কি চরিত্রের সর্বোচ্চ সারাৎসার লুকিয়ে আছে!
প্রসঙ্গত, নতুন সিলেবাসে যোগ, প্রাণায়াম ইত্যাদিও অবশ্যপাঠ্য থাকছে। এবং জেনে রাখা ভাল রামচরিতমানস নয়, আসলে তার জায়গায় পড়ানো হচ্ছে ‘রামচরিত মানসের ফলিত দর্শন ‘ নামের একটি বিষয় — যার বিভিন্ন চ্যাপ্টারে মধ্যে দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা জানতে পারবে “ভারতে দৈব অবতারের অস্তিত্ব “, “মানব চরিত্রের সর্বোচ্চ যোগ্যতা –পিতার প্রতি রামের অপার আনুগত্য” এমনই নানা ধরনের অজানা সব বৃত্তান্ত।
রামের অপার আনুগত্যই উন্নত চরিত্রের দৃষ্টান্ত কিনা সেটা ছাত্রছাত্রী এবং তাদের বাবা মায়ের অভিজ্ঞতাই বলবে। তবে মধ্যপ্রদেশের প্রায় ২ লক্ষ ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রছাত্রীকে এটা যদি একবার বোঝানো যায় “রামচন্দ্র ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন”, তাহলে তারা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাক বা না চাক ‘বিতর্কিত রামসেতু প্রসঙ্গ’টা আরও একবার আক্ষরিক মান্যতা পাবে, তেমনই মনে করছেন বিরোধীরা।
ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। কোনো ব্যক্তির ধর্মীয় বিশ্বাসে আদালত, রাষ্ট্র কারুরই হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। রামেশ্বরম থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত সমুদ্রের বুকে চুনাপাথর নির্মিত অ্যাডামস ব্রীজ বা রামসেতু সত্যিই রামচন্দ্রের তৈরি কিনা সেটা পুরাতাত্ত্বিকদের গবেষণার বিষয়, এবং প্রামাণ্য ভাবে মীমাংসীত নয়। কাজেই ছাত্রছাত্রীর চরিত্র গঠনে সেটা ঠিক কোন ভূমিকা নেবে সেটাও ঠিক পরিস্কার নয়। বিরোধীরা অন্তত তাই মনে করছেন।