নাগাল্যান্ডে জ্বলছে ধিকি ধিকি আগুনের আঁচ। জঙ্গি সন্দেহে ভারতীয় সেনা জওয়ানদের গুলিতে নিহত ১৩ নিরীহ গ্রামবাসী, সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। এদিকে ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকালই নাগাল্যান্ডে সুস্মিতা দেবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল পাঠানোর ঘোষণা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে পরিস্থিতির আঁচ বুঝে আজ সে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। নাগাল্যান্ড পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নাগাল্যান্ড অগ্নিগর্ভ।
নাগাল্যান্ডের ‘মন’ জেলার অন্তর্গত টিরু গ্রাম একেবারে মায়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি। সেখানে প্রায়শই জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু শনিবার রাতে জঙ্গি সন্দেহে যাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হল তারা নিরীহ গ্রামবাসী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে নিহতরা কয়লা খনির শ্রমিক , তারা কাজ সেরে ঘরে ফিরছিলেন। তাহলে হঠাৎ গুলি চালানো হল কেন?
গোপন সূত্রে খবর ছিল সেনাবাহিনীর কাছে, সেই খবরের ওপর ভিত্তি করেই আচমকা অভিযান চালায় অসম রাইফেলসের জওয়ানেরা। আর তাতেই ভুলবশত ঘটে গেছে মর্মান্তিক ঘটনা। সেনাদের অতর্কিত গুলি বর্ষণে লুটিয়ে পড়ে ৬ গ্রামবাসী। এরপরই বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সেনা ক্যাম্পে হামলা চালায়, সেনা জওয়ানদের কয়েকটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। আবারো পাল্টা গুলি চালানো হয়, তখনই মৃত্যু হয় আরো ৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীর। ১ জন সেনা জওয়ান নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতির আঁচ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তৎক্ষণাৎ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয় নাগাল্যান্ড প্রশাসন।
এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে অসম রাইফেলস তাদের বিবৃতিতে জানায়, “গোয়েন্দা মারফত টিরু গ্রামে জঙ্গিদের উপস্থিতির কথা জানতে পারা গিয়েছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান চলে। কিন্তু ভুলবশত যা ঘটল তা খুবই দুঃখজনক।”
কেন্দ্রের তরফ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আস্বস্ত করার চেষ্টা করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় ট্যুইট করে মৃতদের পরিবারের উদ্দেশ্যে সমবেদনা জানান ও ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন। অপরপক্ষে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ট্যুইট করে বলেন, “হৃদয়বিদারক ঘটনা। ভারত সরকারকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।”
সাড়া দেশ জুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে নাগাল্যান্ডের ঘটনা। প্রশ্ন উঠেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে। দেশের নিরাপত্তা রক্ষীদের দ্বারাই দেশের সাধারণ মানুষের প্রাণহানি মেনে নিতে পারছেননা কেউ। তারই মধ্যে আজ আবারো মৃত্যুর খবর। সেনাদলের সাথে তৃতীয় দফা সংঘর্ষে চাঞ্চল্য ছড়ালো গোটা দেশে। অসম রাইফেলসের গুলিতে মত্যু হল আরো ২ গ্রামবাসীর। এই মূহুর্তে সাধারণ গ্রামবাসীদের সাথে সেনাসংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা ১৬। এমনই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি, প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেও বাতিল করল তৃণমূল দল। জরুরি পর্যালোচনার জন্য বৈঠক আহ্বান করলেন নরেন্দ্র মোদী।