“মাধুকরী মানে আমার কাছে ভালোবাসার সরলতা…কোনো মানুষকে দূর থেকে যে এতো ভীষণ কাছের করে ভালোবাসা যায়, এবং তাতেও যে প্রেম, মান, অভিমান, অধিকার,বিরহ, লেগে থাকতে পারে এ অনুভূতি কেবল মাধুকরী পড়লেই পাওয়া যায়….প্রকৃতি বলতে আমরা যেমন জঙ্গল, নদী, পাহাড়, গাছ বুঝি.. তেমনি বুদ্ধদেব গুহর মাধুকরী বলতে ভালোবাসার আবির বা প্রেমহীন জীবনে এক উদাসী মায়াজালকে বুঝি..” প্রয়াত বুদ্ধদেব গুহর ‘মাধুকরী’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এমনই উজ্জ্বল কিছু শব্দ উপহার দিলেন এক তরুণী পাঠিকা।
আবার একটি তারা খসে গেল। রবিবার ২৯ আগস্ট রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন বাংলা সাহিত্যের অগ্রগণ্য লেখক বুদ্ধদেব গুহ। তাঁর লেখা ‘মাধুকরী’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, ‘কোয়েলের কাছে’ ,
‘কোজাগর’ প্রভৃতি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে একেকটি মাইল স্টোন হয়ে থাকবে। বিশেষ করে তরুণ তরুণীর কাছে তাঁর উপন্যাস বিশেষ ভাবে আদৃত। এছাড়াও কিশোরদের তিনি উপহার দিয়েছেন ঋজুদা ও ঋভুর মতো দুটি মনকাড়া চরিত্র।
এপ্রিল মাসেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রবীণ সাহিত্যিক। বাইরের একটি হোটেলে নিভৃত বাসের পর হাসপাতালে ভর্তি হন। সুস্থও হয়ে ওঠেন। কিন্তু কোভিডকে পরাজিত করলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শ্বাসকষ্ট ও মূত্রনালিতে ইনফেকশনের জন্য ৩১ জুলাই তাঁকে কলকাতার বেলভিউ হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। এছাড়াও কিডনি ও লিভারের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ৪ জন ডাক্তারের একটি মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে থাকলেও শেষপর্যন্ত চিকিৎসায় তেমন সাড়া মিললনা। আইসিসিইউতে থাকাকালীন রবিবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্টান্ট বুদ্ধদেববাবু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আয়কর বিভাগেও উপদেষ্টা সদস্য ছিলেন।
তাঁর প্রয়াণের খবরে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।শোকবার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও । নব্বইয়ের কাছাকাছি বয়স হলেও মনেপ্রাণে ছিলেন সদা তরুণ। ভ্রমণ পিপাসু লেখকের পায়ে যথার্থই সর্ষে লাগানো ছিল। এই ভ্রমনের অভিজ্ঞতা সঞ্চারিত বহু লেখায় বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গল দারুণভাবে সেসব লেখায় ধরা দিয়েছে। ‘হলুদ বসন্ত’ উপন্যাসের জন্য ১৯৭৬ সালে আনন্দ পুরস্কার পান।
তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পাঠকমহল। ওই তরুণী পাঠিকার মতোই আমাদের এখন তাঁর সৃষ্টির “উদাসী মায়াজাল” ছুঁয়ে থাকতে হবে ।