‘স্বপ্নের করিডোর’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে ছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এছাড়াও দেশের মোট ১২ টি বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। কাশী বিশ্বনাথ থেকে গঙ্গাতীর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় রূপায়িত হলো ৩৩৯ কোটি টাকার প্রকল্প। বারাণসীতে গঙ্গাস্নান সেরে, কালভৈরব মন্দিরে পূজো দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ করিডোর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনভর চলল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই প্রকল্পের নির্মাণকারী শ্রমিকদের সাথেই এক আসনে বসে আহার করলেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর নিজেরই লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে কাশী বিশ্বনাথ থেকে গঙ্গাতীর পর্যন্ত ৫ লক্ষ স্কোয়্যারফিট সুবিশাল বিস্তারিত পথ এবং পথপার্শ্বের মন্দিরগুলি সাজিয়ে তোলা হল নতুন করে। এই নতুন নির্মিত পথ এবং মন্দিরগুলিরই নতুন নামকরণ করে রাখা হল ‘কাশী বিশ্বনাথ করিডোর।’ এই পুনর্নির্মানে সর্বমোট খরচ হয়েছে ৩৩৯ কোটি টাকা! উত্তর প্রদেশে নির্বাচনের ঠিক আগেই উদ্বোধন হল এই করিডোরের। স্বাভাবিক ভাবেই প্রধানমন্ত্রীর নিজেরই লোকসভা কেন্দ্রে আগমন ও ইতিহাস সমৃদ্ধ তীর্থক্ষেত্রের সংস্কার নির্মাণে সাধারণ মানুষের উচ্ছাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
২০১৯ সালেই এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দুবছর সময় ধরে, এমনকি মধ্যিখানে কোভিড কালীন সংকট মূহুর্ত চলাসত্ত্বেও নির্মাণ কার্য থেমে থাকেনি। আর আজ এই প্রকল্প সম্পূর্ণ রূপায়িত হল।
সংবাদ সংস্থা এএনআই (ANI)-এর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এদিন সকাল সকালেই প্রধানমন্ত্রী বারাণসীতে উপস্থিত হয়েই কালভৈরব মন্দিরে পূজো দেন। এরপরেই যোগী আদিত্যনাথ সহ ১২ জন মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কাশী বিশ্বনাথ করিডোর উদ্বোধনে অংশগ্রহন করেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগে গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণ করার পর হাজার হাজার জমায়েত হওয়া মানুষকে সাক্ষী রেখে গঙ্গায় ডুব দিয়ে স্নান সারেন তিনি।
এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে পূজো ও আরতিতে অংশ নেন। ধূমধাম সহকারে পূজো চলাকালীন সভামঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী। মোদীজিকে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়ে তিনি বলেন, “ভারতের সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রকল্প তারই একটি অঙ্গ। কাশী বিশ্বনাথ ধাম হোক বা অযোধ্যার রামমন্দির, সবকিছুতেই তার ছাপ পাওয়া যাচ্ছে। ”
নিজের বক্তব্যে এদিন মহাত্মা গান্ধীর প্রসঙ্গ তুলে আনেন যোগী আদিত্যনাথ। বলেন, “গান্ধীজি ১০০ বছর আগে বারাণসীতে এসে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। ময়লা, ঘিঞ্জির ভেতরে মানুষের বসবাস দেখে দুঃখ করেছিলেন। মহাত্মার সেই দুঃখ দূর করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।” তিনি আরো বলেন,”কাশীতে একজনেরই সরকার রয়েছে। যাঁর হাতে ডমরু রয়েছে। তাঁর ইচ্ছেতেই এ কাজ সম্ভব হয়েছে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই নতুন নির্মিত করিডোরের কার্যকারিতা বোঝান। বারাণসীর জনসাধারণ এবং বৃদ্ধ মানুষদের সুবিধার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান ইচ্ছে থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। ভারতীয় সংস্কৃতিই যে সারা বিশ্বকে দিশা দেখাতে পারে, এই কাশী বিশ্বনাথ এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প তারই নজির, একথা বারংবারই তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে।
বলতে বলতে মাঝে মাঝেই প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে ধ্বনিত হয়ে উঠছিল স্তবমন্ত্র “হর হর মহাদেব!” সম্মিলিত হাজার হাজার মানুষও আবেগাপ্লুত উচ্চারণে সাধুবাদ জানাচ্ছিলেন।
করোনা মহামারী চলাসত্ত্বেও শ্রমিকরা তাঁদের কাজ অক্ষুণ্ণ রেখে এই নবনির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চালিয়ে গিয়েছেন, এর জন্য শ্রমিকদের বারবার প্রশংসা ও সম্মান জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুধু তাই নয়, শ্রমিকদের সাথেই একাসনে বসে তিন আহার গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ইতিহাস উঠে আসে। তিনি বলেন, “কাশী অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী। অনেক সুলতান এসেছে, চলে গেছে। কিন্তু কাশী ঠিক অবিচল রয়ে গেছে। ঔরঙ্গজেবের অত্যাচারের কথা ইতিহাস জানে। কিন্তু তার বিপরীতে শিবাজিও ছিলেন।”
করিডোর উদ্বোধনের পর সবশেষে যোগী আদিত্যনাথকে সঙ্গে নিয়ে করিডোর পরিভ্রমণ করে, নৌকায় চেপে রবিদাস ঘাটে এসে সন্ত রবিদাসকে উদ্দেশ্য করে প্রার্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘আত্মনির্ভর ভারত গঠনের’ প্রকল্পে আশ্বাস দিয়ে তিনি ঘোষণা করলেন, এদিন থেকেই কাশী বিশ্বনাথ করিডোর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হল।