“সংসদের সদস্যের বদলে রাস্তার লোকের কথায় যদি আইন প্রণয়ন শুরু হয়, তবে এই দেশটাকেও জিহাদিস্তান বলতে হবে”। কেন্দ্রের কৃষি বিল প্রত্যাহার নিয়ে কার্যত এই ভাষাতেই প্রতিক্রিয়া জানালেন কঙ্গনা রানাওয়াত।
বিতর্কিত ৩ কৃষিআইন প্রত্যাহারের ঘটনাকে একদিকে যেমন কৃষক আন্দোলনের জয় আখ্যা দিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ, তেমনই প্রধানমন্ত্রীর আচমকা এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছেননা কেউ কেউ। গত বছরের নভেম্বর থেকে টানা একবছর চলতে থাকা এই কৃষক আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও প্রতিক্রিয়া দিয়ে চলেছিলেন বলিউডের সমাজ সচেতন তারকারাও। এঁদের মধ্যে অবশ্যই সোনু সুদ, তাপসী পান্নু, হিমাংশী খুরানা যেমন কৃষকদের সপক্ষে ছিলেন, উল্টোদিকে বিজেপি ঘনিষ্ঠ কঙ্গনা রানাওয়াত গোড়া থেকেই ছিলেন এই আন্দোলনের বিরোধী।
আন্দোলন চলাকালীন তিনি একটি পোস্টে রটিয়ে দেন ‘শাহীন বাগ দাদি’ বলে পরিচিত বিলকিস বানো নামে একজন আন্দোলনকারী এখানে রয়েছেন যাঁকে সব আন্দোলনেই ভাড়া পাওয়া যায়! আসলে কঙ্গনার দ্বারা রটিত এই খবর ছিল সম্পূর্ণ ভূয়ো, এবং ব্যাপক ট্রোলের মুখে পড়ে অবশেষে পোস্টটি মুছে দিতে বাধ্য হন। সেই কঙ্গনাই আজ নরেন্দ্র মোদীর সিদ্ধান্তকে ইনস্টাগ্রামে “দুঃখজনক, নিন্দনীয় এবং অন্যায্য আখ্যা দিয়েছেন”।
আজ গুরুনানকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহার ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এদিনের ভাষণে মোদীজি স্পষ্টতই স্বীকার করে নেন, “হয়তো আমাদের তপস্যায় কিছু ঘাটতি ছিল, তাই সব কৃষককে এই আইন সম্পর্কে আমরা বোঝাতে পারিনি। কিন্তু আজ প্রকাশপর্ব। আজ আমি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলছি, ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলাম”।
৩ বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে দিল্লীর কাছে অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে বছর ব্যাপী অবস্থান বিক্ষোভ দেখিয়ে চলেছিলেন পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের অগণিত কৃষক। যে আন্দোলনের সুফল ফলল বলেই মনে করছেন অনেকেই।
পাশাপাশি মোদীজির অন্ধভক্ত কঙ্গনা রানাওয়াত এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক আঘাত পেয়েছেন। যার প্রকাশ ঘটিয়েছেন ইনস্টায়। মাসের পর মাস ‘রাজপথে’ ধর্নায় বসে থাকা কৃষকদের একদিকে যেমন তিনি ‘রাস্তার লোক’ বলে অপমানের নিশানা করেছেন, পাশাপাশি বিপরীত দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছেন ইন্দিরা গান্ধীর ছবি। যেখানে ইন্দিরাকে সম্মান জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, “যখন রাষ্ট্রের বিবেক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল, তখন লাঠিই শেষকথা আর একনায়কতন্ত্রই একমাত্র সমাধান। শুভ জন্মদিন ম্যাডাম প্রাইম মিনিস্টার”। উল্লেখ্য, এই দিনটা ছিল ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন।
ইন্দিরা গান্ধীকে সামনে রেখে মোদীভক্ত ক্ষুব্ধ কঙ্গনা কি অভিমান প্রকাশ করতে চাইলেন? নেটনাগরিকরা সেই প্রশ্নই করছেন।
তবে কৃষকদের ওপর ‘লাঠির’ দাওয়াই প্রয়োগ না হওয়ায় দুঃখিত কঙ্গনার কানে যে অসংখ্য কৃষকের মৃত্যুর আর্তনাদ পৌঁছেও পৌঁছয়নি তাতে সন্দেহ নেই। আপাতত দেশটাকে ‘জেহাদিস্তান’ কল্পনার দুঃস্বপ্নে বুঝি তার রাতের ঘুম উড়ে গেল! অসংখ্য ভারতবাসী এমনটাই মনে করছেন।