মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় কলকাতাবাসী তখন বেরিয়ে পড়েছেন পূজা পরিক্রমায়। পরিপাটি সাজেগোজে সজ্জিত হয়ে দক্ষিণ কলকাতার আলোর ঝলকানি দেখতে দেখতে মুদিয়ালির পূজো দেখে যেই লেক টেম্পল রোডের দিকে এগোচ্ছেন অমনি শুনতে পেলেন মাইকে লকডাউনের ঘোষণা। মিনিট খানেক থমকে দাঁড়াতেই হবে ঘোষণা শুনে। তারপর চমকিত! ওই তো দিব্যি আলো জ্বলছে, পুজোও হচ্ছে! লকডাউনের একটানা ঘোষণা শুনতে শুনতেই দূর থেকে হাতছানি দেবে মন্ডপসজ্জা।
এতক্ষণে সকলে ঠিকই বুঝে গেছেন ওটাই আসলে থিম। লেক টেম্পল রোড সংলগ্ন ‘শিবমন্দির’-এর দুর্গাপুজোর এবারের থিম –লকডাউন।
নিয়ম অনুযায়ী মন্ডপের বাইরে থেকেই দেবীপ্রতিমার দর্শন করতে হবে। তবে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দেবে এই পুজোর আশ্চর্য মন্ডপসজ্জা! যাপিত জীবনের অস্বাভাবিক বিপর্যয়ের খন্ডচিত্র দিয়েই সাজানো হয়েছে মন্ডপ। বন্ধ দোকানের জামা পরানো ম্যানিকিন থেকে শুরু করে ত্রাণসামগ্রী, অফিস ব্যাগ, বালিশ কম্বল, রেশনের থলে কিছুই প্রায় বাদ নেই। সব কেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোটা মন্ডপের অগোছালো আলোআঁধারি সাজসজ্জা ঘিরে। মন্ডপের একেবারে প্রবেশমুখেই দাঁড় করানো একটা রিক্সা, সেই রিক্সায় বসানো মাইকেই বেজে চলেছে ২০২০ সালের মার্চ মাসের একটানা লকডাউন ঘোষণা।
কিন্তু একটি উল্লেখ্য বিষয় –এই মন্ডপ সজ্জাতেও ব্যবহার করা হয়েছে জুতো। মন্ডপের দুইধারে সাজানো রয়েছে অসংখ্য অগণিত চটিজুতো! এতে অনেকেরই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে। তবে এটাই রক্ষা, ‘দমদম পার্কের’ মতো লেক টেম্পল রোডে বিশেষ এক রাজনৈতিক দলের এখনও নজর পড়েনি। নাহলে ওই একই ইস্যুতে টালিগঞ্জের এই ‘শিবমন্দির’-এর পূজোতেও হিন্দু ধর্মে আঘাতের জিগির তুলে প্যান্ডেল মাথায় তুলে দিতেন।
প্রসঙ্গত ‘দমদম পার্কের’ জুতো বিতর্ক সম্পর্কে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন , “মা জগদ্ধাত্রীই তার সন্তানদের আশীর্বাদ করছেন। আর চটি জুতো মানুষের জীবনযাত্রার অঙ্গ, সেটা বোঝাতেই তারা প্রতিমা থেকে অনেক দূরেই চটিজুতো দিয়ে সাজিয়েছেন। এতে ধর্মে আঘাতের কোনো সম্ভাবনা নেই “।
সেই কথাই মাথায় রেখে লেক টেম্পল রোডের পুজো থিমে বিপর্যস্ত জীবন যাত্রার অঙ্গ হিসেবেই ত্রান সামগ্রীর পাশাপাশি চটিজুতোর অবস্থান হিসেবেই অনেকে হয়তো বিষয়টা মেনে নেবেন, এমনটাই মনে হয়।