দিনটা ছিল কৌশিকী অমাবস্যা। আর সেই দিনটাকেই খুনের জন্য বেছে নেওয়া হয়। বেহালার পর্ণশ্রীর একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে নির্মম ভাবে খুন হয় ১৩ বছরের বালক তমোজিত ও তার মা সুস্মিতা মন্ডল। ফ্ল্যাটের পাশাপাশি দুটো ঘরে গলাকাটা অবস্থায় দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর খুনের তদন্ত রহস্য কাহিনীকেও হার মানিয়েছে। অবশেষে আজ ধরা পড়ল খুনীরা।
গোড়া থেকেই সন্দেহের তীর ছিল তমোজিতের বাবা , মৃতা সুস্মিতার স্বামী তপন মন্ডলের দিকে। দুপুরে খুনের সময়ে ফোন বন্ধ, এছাড়াও কথাবার্তার মধ্যে হাজারো অসঙ্গতি ধরা পড়ায় তপনবাবুকে জেরায় জেরবার করে তোলে পুলিশ। যোগাযোগ করা হয় তমোজিতের স্কুলেও, সেখানেই প্রথম জানা গেছিল খুনের সময় অর্থাৎ ৩টে থেকে ৫টার মধ্যে তমোজিত অনলাইন ক্লাস থেকে আচমকাই ডিসকানেক্ট হয়ে যায়।
খুন করে কিছু গয়না, চাবি ও মোবাইল হাতিয়ে প্রমাণ লোপাটের জন্য ফ্ল্যাটের বাথরুমেই স্নান করেছিল খুনিরা।
অদ্ভুত টাইমিং সেন্স, বিনা বাধায় ফ্ল্যাটে প্রবেশ , এবং বেপরোয়া যাতায়াত এসব মিলিয়ে একটা সূত্রই উঠে আসছিল খুনী নিহতদের পরিচিত কেউ।
তপনবাবুকে জেরা করে যখন রহস্য সমাধানের সুতো মেলানোর চেষ্টা করছে পুলিশ, ঠিক সে সময়েই হঠাৎ রহস্যের মোড় ঘুরে যায় অন্যদিকে।
সুস্মিতা দেবীর যোগাযোগ পাওয়া যায় তারাপীঠের এক তান্ত্রিকের সাথে। যার সাথে বহুবার কথা বলেছেন নিহত সুস্মিতা। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে শুধুই কথা নয়, তারাপীঠে প্রায়শই যাতায়াতও ছিল। তার ওপর খুনের দিনের তিথি মিলিয়ে চমকে যায় পুলিশ। ঘোর কৌশিকী অমাবস্যায় তন্ত্রসিদ্ধ ওই পুরুষই এসেছিলেন তাহলে?
কিন্তু না। শেষমেশ অপ্রত্যাশিত ভাবেই যবনিকা পড়ে গেল। ধরা পড়ে গেল আসল খুনীরা।
এত জটিল খুনের কেসে এমন আচমকা সমাধান? প্রশ্ন উঠতেই পারে। সেই সঙ্গে না মেলা প্রচুর প্রশ্নও উহ্যই থেকে যায়। ঠিক যেমন জানতে পারা যাচ্ছেনা মৃতদেহ স্পর্শ না করেও তপন মন্ডলের হাতের আংটিতে রক্ত লাগলো কীভাবে? তারাপীঠের ওই তান্ত্রিকের কাছে ঘন ঘন যেতেন কেন পেশায় শিক্ষিকা সুস্মিতা মন্ডল? খুনীরা যদি ১২ টায় ফ্ল্যাটে ঢুকে থাকে, তাহলে খুনের আগে অতক্ষণ তারা কী করছিল?
আপাতত সেসব প্রশ্ন অমীমাংসীতই থেকে গেল। খুনী সুস্মিতার দুই মাসতুতো ভাই। মহেশতলার ঘোষপাড়া শ্যামপুরে থাকতেন সন্দীপ দাস(৩২) ও সঞ্জয় দাস(৪৪)। লালবাজার তদন্তে জানতে পেরেছে দুই ভাইয়ের ধারদেনা হয়ে গেছিল প্রচুর। তাই দিদির গয়নার লোভেই খুন। ঘটনাটা দেখে ফেলায় ভাগ্নেকেও তারা খুন করতে বাধ্য হয়।
দোষীরা খুনের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছে।