বাংলার রাজনীতিতে দলবদল রুটিনের মতোই হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে সব দলের সব্বাইকে একাই টেক্কা দিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। একবছরে ২ বার দলবদল তাঁর মতো কেউ করেননি। ২০২১-এ মমতার ছবি বুকে নিয়ে নাটকীয়ভাবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে, সেই বছরই আবার পুরোনো দলেই ফিরে এসে যোগদান, তৃণমূল কংগ্রেসের একটা বড় অংশই যে এটা ভালো চোখে নেননি, তাঁর নিজের এলাকা ডোমজুড়েই তার প্রমাণ মিলল।
নিজের এলাকা হাওড়ার ডোমজুড়ে কোনও এক প্রয়াত তৃণমূল নেতার শেষকৃত্যে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি গাড়ি থেকে নামার সাথেসাথেই কালো পতাকা দেখিয়ে ‘গোব্যাক’ শ্লোগান উঠতে থাকে। ভিড় টপকে এলাকায় প্রবেশ করতেই পারলেননা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
এলাকার বিজেপি শিবিরের দাবি এটা তৃণমূল কর্মীদেরই কাজ। বিজেপি নেতা উমেশ রায় এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন,”তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এটা ঘটেছে। অত্যন্ত নিন্দনীয় বিষয়।কারুর মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন, তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে দেওয়া উচিত ছিল।”
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যদিও প্রথমে জানানো হয় এটা গ্রামবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ, দলের সাথে কোনও যোগ নেই। তবে শেষপর্যন্ত দায় স্বীকার করেই নিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দলে ফিরিয়ে নিলেও, বিজেপির ‘দাগ লাগা’ রাজীবকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেই এখনও মনে করছে হাওড়ার ঘাসফুল শিবির, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেই তা পরিস্কার হয়ে যায়। তিনি বলেন, “ডোমজুড় কি ওর পৈতৃক সম্পত্তি নাকি? ডোমজুড় আবার কবে থেকে ওর এলাকা হল? সাড়ে তেতাল্লিশ হাজার ভোটে হারিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। ডোমজুড়ের মানুষজন তবু ভদ্র বলে কালো পতাকা দেখিয়েছে। অন্যকিছু করেনি এটাই অনেক।”
বোঝা যায় দলত্যাগী রাজিবের দলফেরত নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই। উল্লেখ্য, তৃণমূলে ফেরার পর থেকে তিনি দলের কাজে ত্রিপুরাতেই ছিলেন। এলাকায় ঢুকলেন এই প্রথম। সেপ্রসঙ্গ উল্লেখ করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো আমাকে বলেছিল রাজীব পশ্চিমবঙ্গে থাকবেনা। ও ত্রিপুরায় রাজনীতি করবে। তাহলে ডোমজুড়ে কী করছিল?”
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে শীতল হুমকি দিয়ে ডোমজুড় থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দলে ফিরলেও, হাওড়ায় তিনি ব্রাত্য, এটাই বুঝিয়ে দিল এলাকার তৃণমূল শিবির।