বিজেপির ভরাডুবি নিয়ে সবচাইতে যিনি আশঙ্কিত, তিনি প্রাক্তন রাজ্যপাল, বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথাগত রায়। দলকে বাঁচাতে তিনি যে সৎ পরামর্শ দিতে কিছুতেই পিছপা হবেননা, বৃহস্পতিবারের ট্যুইটে আরো একবার সেটা পরিস্কার ঘোষণা করলেন। এটা তাঁর প্রতি অভিযোগের জবাবও বটে।
এদিন ট্যুইট মারফত তিনি বললেন, “বিজেপির শুভানুধ্যায়ীরা বলছেন, টাকা ও নারী নিয়ে আমার অভিযোগ প্রকাশ্যে নয়, দলের ভেতরে করা উচিত। আমি সবিনয়ে জানাই, সে সময় পেরিয়ে গেছে। বিজেপি আমাকে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে কিন্তু, নিজেদের চালচলন যদি আমূল সংস্কার না করে তাহলে পশ্চিমবঙ্গে দলের অবলুপ্তি অবশ্যম্ভাবী “।
এতটা জোরের সাথে, এমন তীক্ষ্ণ সমালোচনা নিজেরই দল সম্পর্কে একমাত্র তথাগতই করতে পারেন, সেটা রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন। তেমনই আশ্চর্য লাগছে এই ভেবে, আর্থিক কেলেঙ্কারি, নারীচক্র এসব নিয়ে প্রকাশ্যে ক্রমাগত বলে চলা সত্ত্বেও বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই নিচ্ছেনা কেন!
প্রসঙ্গত , তথাগত ওই বিতর্কিত ট্যুইটটি গত সোমবার করেছিলেন। যেখানে তিনি সাফ বলেছেন, “বিজেপিকে অর্থ এবং নারীচক্র থেকে টেনে বের করে আনা আবশ্যক। তরুণরা নেতৃত্ব দিন…”। উল্লেখ্য, এখানে ‘তরুণরা’ শব্দটি লক্ষ্য করার মতো। নিঃসন্দেহে তিনি সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীর কথাই বলেছেন।
সেকারণেই কি এতটা বেপরোয়া তথাগত রায়!
রাজ্যবিজেপির ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ যে এই দুই তরুণ প্রতিনিধির হাতেই, সেকথা অনেকেই স্বীকার করছেন ; বিশেষ করে ২৮ বছরের পুরোনো কর্মী সুরজিত সাহাকে বহিস্কারের পর থেকে আর কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।
প্রসঙ্গত এই ট্যুইটের মোক্ষম দাওয়াই দিতে বিজেপি একটা পাল্টা চাল দিয়েছিল। আইনজীবি সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় তথাগত রায়ের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় মামলা করেছিলেন। প্রাজ্ঞ নেতা যেখানে ‘বিধানসভা নির্বাচনে নারীচক্র ও আর্থিক তছরুপ’-এর অভিযোগ তুলেছেন, তাতে বিষয়টির পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত, আর যিনি বলছেন তাঁর কাছে কী প্রমাণ রয়েছে জানা দরকার, এই ছিল আইনজীবির কৌশলি প্যাঁচ।
তবে সে মামলা যে তথাগত রায়কে একচুলও দমাতে পারেনি, সেটা দশদিনের মাথায় প্রকাশ্যে আবারো ট্যুইট করে বুঝিয়ে দিলেন ; যে যা পারে করে নিক, দলের ভালোর জন্য দলের সমালোচনা তিনি প্রকাশ্যেই করবেন জানিয়ে দিলেন সেটাও। এতে বর্ষীয়ান নেতার ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। দল কি এবার থেকে তাঁকে একটু সমঝে চলবে ? ভবিষ্যতে সেটাই দেখার।