দিল্লীতে বায়ুদূষণ নিয়ে তীক্ষ্ণ প্রশ্নের মুখে পড়ে উত্তর প্রদেশ সরকার জানালো দিল্লীর দূষণের জন্য পাকিস্তানের দূষিত হাওয়া দায়ী! এই উদ্ভট যুক্তি শুনে থমকে গেলেন স্বয়ং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি।
দিল্লীর দূষণ মাত্রা ছাড়িয়েছে। সেকারণে শুধু দিল্লীই নয়, উত্তরপ্রদেশ সরকারও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের কারখানাগুলো থেকে লাগাতার নির্গত ধোঁয়া পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, এই মর্মেই প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে এই প্রশ্নের জবাবে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার যে যুক্তি দেখালো, তাতে হয়রান সুপ্রিম কোর্টও।
যোগী সরকারের পক্ষ থেকে সাফ বলে দেওয়া হল, “দিল্লীর বায়ুদূষণে উত্তরপ্রদেশের কোনও হাত নেই, পাকিস্তান থেকে আসা দূষিত বাতাসই পরিবেশ দূষিত করছে।”
কিসের সাথে কিসের খিচুড়ি! এই যুক্তির প্রেক্ষিতে কী বলবে সুপ্রিম কোর্ট? কিছুক্ষণ স্তব্ধ হতবাক থেকে বিচারপতি এন ভি রামানা পাল্টা বলেন, “তবে আপনারা কি চান পাকিস্তানকে ইন্ডাস্ট্রি ব্যান করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে?”
এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি যোগী সরকার। শুধু পাখির চোখের মতো তাদের একটাই লক্ষ্য পাকিস্তান!
প্রসঙ্গত, মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশ দূষণের কারণে কঠোর সওয়াল জবাবের মুখোমুখি হয়েছে কেন্দ্র ও দিল্লীর রাজ্যসরকার। বাড়িতে বড়দের ওয়ার্ক ফ্রম হোম, আর এই দূষণে ভরা দমবন্ধ আবহাওয়ায় ছোট ছোট ছেলেমেয়ের স্কুলে যাচ্ছে! এই পরিস্থিতিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে স্কুল বন্ধের কথা ঘোষণা করে দেয় অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার। এ যেন আরেক অবাক করা কান্ড, কানের ফোঁড়ায় মাথা কেটে নেওয়ার সামিল!
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আকাশ থেকে পড়ে জানান, স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ তো আদালত দেয়নি!
আসলে প্রকৃত সমস্যা থেকে দৃষ্টি সরাবার এই প্রহসন লীলা দেখে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলেন বিচারপতি এন ভি রামানা। বারংবার ‘দূষণ’ শব্দটির ওপর জোর দিচ্ছিলেন তিনি। দূষণ! বায়ুদূষণ! এয়ার পলিউশন, যা এই মূহুর্তে শ্বাসরোধকারী অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে তার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে? জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত।
জবাবে উত্তরপ্রদেশ সরকারের পাকিস্তানের মতোই দিল্লী সরকারেরও সেই এক পোঁ — ‘দুটো অপশানই রয়েছে, অফলাইন ও অনলাইন ক্লাস!’ রাজ্যসরকারের তরফের আইনজীবি মনু সিংভি জানান, ‘অতিমারি চলাকালীন অনলাইন ক্লাসের জন্য লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে তাই স্কুল খোলা হয়েছে। ইচ্ছে হলে ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতেও অনলাইন ক্লাস করতে পারেন!’
এগুলো কী প্রকারের যুক্তি? সওয়াল করে বিচারপতি এন ভি রামানা শিশু পড়াবার মতো করেই সরকারি প্রতিনিধিদের বলেন, “অফলাইন ক্লাসের সুযোগ থাকলে কেউ বাড়িতে বসে থাকবে কেন? আমাদেরও পরিবার, সন্তান, নাতিনাতনীরা রয়েছে। দিনের পর দিন বাড়িতে বসে থাকলে কতটা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে, তা আমরা প্রত্যেকেই জানি বুঝি।”
এরপর সোজাসুজি পরিস্কার ২৪ ঘন্টা সময় দিয়ে অবিলম্বে দূষণ সম্পর্কে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তখনই তাড়াহুড়ো করে দিল্লী সরকার স্কুল বন্ধের ঘোষণা করে।
এদিন দূষণ প্রসঙ্গ নিয়ে যোগী আদিত্যনাথের বক্তব্য ও দিল্লী সরকারের সমস্যার সুরাহার আশ্চর্য পদক্ষেপ দেখে সুপ্রিম কোর্ট মাত্রারিক্ত বিস্মিত! তাহলে হিসেবটা কী দাঁড়ালো? দূষণের জন্য পাকিস্তানের হাওয়া দায়ী, আর তার সমাধান হল অনলাইন ক্লাস?
শীর্ষ আদালত রীতিমতো চিন্তিত।