দীর্ঘ তপস্যার পর সন্তুষ্ট ব্রহ্মার কাছে অমরত্বের বর চেয়েছিলেন মহিষাসুর। চালাকিটা সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাই তখন করেছিলেন — মহিষাসুরকে বর দিয়েছিলেন ‘কোনো পুরুষই তাঁকে মারতে পারবেনা’। মহিষাসুরও সেই বরে অমরত্বের আশায় আনন্দে তখন করেছিলেন — মহিষাসুরকে বর দিয়েছিলেন ‘কোনো পুরুষই তাঁকে মারতে পারবেনা’। মহিষাসুরও সেই বরে অমরত্বের আশায় আনন্দে আত্মহারা। কারণ তাঁর লিঙ্গগত চেতনায় পুরুষই যুদ্ধের প্রতিভূ। তবুও মৃত্যু এল। যুদ্ধ করতে এলেন ঐশ্বরিক বলে সৃষ্ট এক নারী! পরাজিত হলেন মহিষাসুর। এই পৌরাণিক আখ্যানের মতোই উত্তর কলকাতার একটি দুর্গাপূজোয় মহিষাসুর রূপী ধর্মীয় মৌলবাদীদের মুখে ঝামা ঘষতে চলেছেন রূপান্তরকামী পুরুষ ও নারীরা।
উত্তর কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিটের বৃন্দাবন মাতৃমন্দির। এবার তাদের পূজোর থিম ‘রূপং দেহী’। এই থিমের মধ্যে দিয়েই তারা তুলে ধরছেন ট্রান্সজেন্ডার অর্থাৎ রূপান্তরকামী নারী পুরুষের কঠিন জীবনযুদ্ধের কাহিনী।
১১২ বছরে পা দিল বৃন্দাবন মাতৃমন্দিরের দুর্গাপূজো। আসলে এই থিমের অনুপ্রেরণা এক রূপান্তরিত নারী শ্রী ঘটক। প্রাকৃতিক নিয়মেই পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে মেয়ে ভাবতেন শ্রী। ভালোবেসেছিলেন তার পুরুষবন্ধু সঞ্জয়কে। সহজ ছিলনা সেটা মোটেই। সমাজের সাথে, সংস্কারের সাথে এমনকি নিজের শরীরের সাথেও তীব্র সংঘাতে জর্জ্বরিত শ্রী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিজেকে নারীতে রূপান্তরিত করেন। ২০১৭ সালে বন্ধু সঞ্জয়কে বিয়ে করেন তিনি। এই শ্রীকে দিয়েই দুর্গাপ্রতিমার নাকে নথ পরিয়ে দেবীপক্ষের শুভ সূচনা করল পূজো কমিটি। আর পুজো মন্ডপ সজ্জিত হয়ে উঠতে চলল এমনই অসংখ্য ট্রান্সজেন্ডারদের জীবন সংগ্রামের প্রতীকি কাহিনী দিয়ে।
সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার মতোই এখানে থিমের শিল্পরূপ দিয়েছেন মন্ডপ শিল্পী কমলেশ সেনগুপ্ত। কমলেশ জানিয়েছেন এই অভিনব পরিকল্পনার সাথে যুক্ত হয়ে ভীষণ খুশি তিনি।
মন্ডপসজ্জায় প্রথমেই দর্শনার্থীরা দেখবেন একটি বিশাল আয়না, যার প্রতিবিম্বে একজন পুরুষ নিজেকে নারীরূপে দেখছে। মন্ডপের প্রবেশপথের দুইদিকে ফুটিয়ে তুলছেন রূপান্তরিত পুরুষ ও নারীদের দৃশ্যরূপ। আর একেবারে মধ্যস্থলে ‘গর্ভগৃহে’র ওপরে একটি ভ্রূণ! যাকে দেখে আপনিই প্রশ্ন করবেন কে সে? পুরুষ না নারী?
পুজো থিমের মূল অনুপ্রেরণা যিনি সেই শ্রী ঘটক মাকে নিজের হাতে নথ পরিয়ে বলেছেন,”দুর্গাপুজোর মতো বিরাট আয়োজনে আমাদের কথা তুলে ধরার যে সাহস দেখিয়েছেন উদ্যোক্তারা, তা সত্যিই প্রশংশনীয়। …এভাবেই ট্যাবু ভাঙতে হবে”।