VoiceBharat News IMG 20211227 154023

ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষ টানা দুশো বছর ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকলেও, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বারংবার উঠে আসছে ঔরঙ্গজেব তথা মুঘল শাসকদের প্রসঙ্গ। স্বভাবতই ব্যাপারটা এবার দৃষ্টিকটু হয়ে উঠছে। ইচ্ছাকৃত মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা জাগানোই কি উদ্দেশ্য! প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

VoiceBharat News images 2021 12 27T153738.739


কিছুদিন আগেই বারাণসীতে কাশী বিশ্বনাথ করিডোর উদ্বোধনে ঔরঙ্গজেব প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবার আবারো পঞ্জাব নির্বাচনকে সামনে রেখে ঔরঙ্গজেব প্রসঙ্গ টেনে আনলেন প্রধানমন্ত্রী। গত শনিবারই কচ্ছের গুরুদ্বারের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে গুরু তেগ বাহাদুরের বীরত্ব দেশকে শেখায় কীভাবে সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়।”

VoiceBharat News IMG 20211227 154440
বক্তব্যের এই অংশে একটু অবাক চোখেই লক্ষ্য করতে হয়, প্রধানমন্ত্রীর ‘ধর্মীয় মৌলবাদ’ উল্লেখ প্রধানত মুসলিমদেরই উদ্দেশ্যে, তা নাহলে খেয়াল করতেন , রাহুল গান্ধী বর্ণিত কট্টর হিন্দুত্ববাদ পরোক্ষে হিন্দু মৌলবাদ নামেই পরিচিত। সে যাই হোক, আপাতত বিশেষজ্ঞরা ইতিহাসবিদ প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতেই মনোযোগ দিতে বলছেন, যে বিবৃতি আমাদের শেখায় — ঔরঙ্গজেবই একমাত্র মুঘল সম্রাট ছিলেন, যেন তাঁর আগে বা পরে কেউ সম্রাট হননি! তানাহলে বারবার এই প্রসঙ্গ টেনে আনা কেন? ইতিহাস চর্চাকারীদের মতে, মুঘল আমলের প্রথম পর্যায় নিয়ে বলতে গেলে কিছু উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ পররাষ্ট্রের শাসনকর্তা হলেও ব্রিটিশদের মতো মুঘলরা সর্বগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদীতা পোষণ করতেননা। পররাষ্ট্র হলেও মুঘলরা ভারতকে অধীনস্থ নয়, বরং নিজেদেরই অঙ্গ ভাবতেন, এই দেশের সংস্কৃতির কদর করতেন।

VoiceBharat News images 2021 12 27T153533.318

শেষ পর্যায়ের ঔরঙ্গজেবের কালিমালিপ্ত অধ্যায়টুকুই আপাতত পঞ্জাব ভোটের জন্য বিজেপির প্রয়োজন বলেই কি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই প্রসঙ্গ? ইতিহাস সচেতন কিছু মানুষের মনে এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। এরপরেই মোদীজি শিখধর্মের বীরত্বের কথা, আধ্যাত্মিকতার সঙ্গেই দেশের নিরাপত্তার কথাও শিখগুরুরা ভাবতেন সে প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন। তাতে অসুবিধা নেই।

সমস্যা হল উত্তরপ্রদেশের পর পঞ্জাবেও ধর্মীয় বিভেদকে সরাসরি রাজনীতির সাথে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। দেশের বেশকিছু সচেতন মানুষ যে পন্থার বিরোধী এবং কার্যত এই কাজ অসাংবিধানিক।

প্রসঙ্গত নরেন্দ্র মোদীর এই বক্তব্যকে কটাক্ষ করে শিবসেনা বলেছে, “সব কা সাথ, সবকটা বিশ্বাস’ এই শ্লোগান একমাত্র অটলবিহারী বাজপেয়ীজির মুখেই মানাত। মোদীজি সবাইকে নিয়ে চলা তো দূর, উল্টে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকেই উদ্দেশ্য করে তুলেছে।” শিবসেনা নেতৃত্বের পক্ষে সঞ্জয় রাউত বলেছেন, “জওহরলাল নেহরুর পরে বাজপেয়ীজি দ্বিতীয় নেতা যাঁকে গোটা দেশ সম্মান করত। পুদুচেরি হোক বা নাগাল্যান্ড, সমস্ত মানুষ তাঁকে সম্মানের সাথে স্মরণ করে থাকেন।”
বর্তমানে বিজেপি সেই অবস্থান থেকে ভ্রষ্ট বলেই শিবসেনা নেতৃত্ব মনে করেছেন।

 

By Partha Roy Chowdhury (কিঞ্জল রায়চৌধুরী)

Partha Roy Chowdhury (Bengali: কিঞ্জল রায়চৌধুরী) is staff journalist VoiceBharat News. email: kinjol@voicebharat.com