উপনির্বাচনের ফলাফলই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দিচ্ছে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত উপনির্বাচনে ৩ কেন্দ্রে ডাহা হেরে যাওয়ার পর এবার আসন্ন উপনির্বাচনের ৪ কেন্দ্রে যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে। তার মধ্যে একটি কেন্দ্র আবার উত্তরবঙ্গে। আর সেখানেই ঘটল বিরাট বড় ভাঙন।
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই গেরুয়া শিবিরে ফাটল দেখা দিয়েছিল। দলবদলের হিড়িক পড়ে গেছিল, এখনও যা অব্যাহত। স্বাভাবিক ভাবেই এমন একটা পরিস্থিতিতে উপনির্বাচন চাইছিল না বিজেপি, কিন্তু ‘পাঞ্চজন্য'(শঙ্খ) বেজে ওঠায় যুদ্ধের ময়দানে নামা ছাড়া এখন আর কোনো উপায় নেই।
গোসাবা, খড়দা, শান্তিপুর ও দিনহাটায় আগামী ৩০ অক্টোবর স্থির হয়েছে উপনির্বাচন। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচারে তো নামতেই হবে! কিন্তু বিজেপির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বলে দিচ্ছে হাওয়ার গতি মোটেই তাদের পালে নেই। পালে হাওয়ার চাইতে পালানো নেতার সংখ্যাই বাড়ছে। ৪ কেন্দ্রের মধ্যে উত্তর চব্বিশ পরগনার খড়দা একটি, যেখানে মূল সংগঠক সব্যসাচী দত্তই তৃণমূলে ফিরে গেছেন।
শান্তিপুরেও হাওয়া প্রতিকূল। কেননা এখানে বিজেপির প্রার্থী সুরঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে ভোট পর্যবেক্ষক সাংসদ জগন্নাথ সরকারের সম্পর্ক ভালো নয়। ফলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সম্ভাবনা রয়েছে। তার ওপর বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিত কী প্রভাব ফেলবে তা এখনই নিশ্চিত নয়। একমাত্র ক্ষীণ আশার আলো জ্বলছে গোসাবায়। আর কোচবিহারের দিনহাটায় দেখা দিল বিশাল বড় ভাঙন।
দিনহাটার ২ নম্বর ব্লকের নয়ারহাটে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ২৬৩ টা পরিবার। তৃণমূলে যোগ দিলেন বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক সুদেব কর্মকার এবং দিনহাটার কেন্দ্রীয় সংযোজক কল্যাণ সরকার। তাদের সাথেই তৃণমূলে চলে গেলেন বিজেপির একঝাঁক নেতাকর্মী। এই ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই গেরুয়া দলের কোচবিহার শাখার আত্মবিশ্বাসে টাল খাইয়ে দিয়েছে, যদিও প্রকাশ্যে তা স্বীকার করতে চাইছেননা তাঁরা।
দিনহাটার বিজেপি নেত্রী ও বিধায়ক মালতী রাভা রায় বলেছেন,”মানুষ ভোট দিতে পারলে এই কেন্দ্রে আমরা বিপুল ভোটে জিতব। তৃণমূল জানে ওরা জিতবেনা, তাই সন্ত্রাস করছে”। মালতী দেবীর এই বক্তব্য নতুন কিছু নয়। গত উপনির্বাচন থেকেই বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে না দেওয়া এবং ভয় দেখিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ তুলে আসছে — যার ভিত্তিগত প্রমাণ কেউই দেখাতে পারেননি।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজ্য সম্পাদক কুনাল ঘোষ তো আগেভাগেই বিজয় পতাকা তোলার ঘোষণাই করে ফেলেছেন প্রায়। ৪-০ ফলাফলে বিজেপি হারবে এই আগাম বার্তা জানিয়ে কুনাল ঘোষ বলেছেন, “কারণ খুব পরিস্কার। চার কেন্দ্রেই রান্নার গ্যাস পেট্রোল ডিজেলের দাম বেড়েছে। চার কেন্দ্রেই মানুষ কন্যাশ্রী ও লক্ষীর ভান্ডার পেয়েছেন “।
এভাবেই তৃণমূলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিতেও ভোলেননি কুনাল ঘোষ।
এখন সত্যিই ইভিএমে কী ঘটে তার জন্য ৩০ অক্টোবরের অপেক্ষা।