দুই বাংলার সাথে সমস্ত সংযোগ ছিন্ন করে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। হাসপাতাল থেকে বেশ কিছুটা সুস্থ হয়ে ফিরে এলেও কথাবার্তা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যাও ছিল। কাল ১৫ নভেম্বর রাত ৯:০০ টা নাগাদ রাজশাহীর বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এপার ওপার দুই বাংলার সাথেই লেখকের জীবন ও স্মৃতি জড়িত ছিল। ১৯৩৯ সালে অবিভক্ত বাংলায় বর্ধমানের যবগ্রামে জন্ম লেখকের। দেশভাগের পর তাঁরা সপরিবারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স করার পর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ছাত্র থাকাকালীনই রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলেন, পাকিস্তান সেনার দ্বারা অত্যাচারিতও হয়েছিলেন সেসময়। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও তাঁর নাম ওতপ্রোত জড়িত।
একাধারে ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে নিজের পাকাপাকি আসন তৈরি করে নিয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক। উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থগুলির মধ্যে ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য ‘, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘আাত্মজা ও একটি করবী গাছ’ দুই বাংলার পাঠকের মনে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকবে।
পাঠকের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় করে তোলে লেখকের মর্মস্পর্শী উপন্যাস ‘আগুনপাখি’। লেখক জীবনের প্রায় মধ্যপর্ব পেরিয়ে উপন্যাস লিখতে শুরু করেন তিনি।
২০০৬ সালে প্রকাশিত ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসে অবিভক্ত বাংলাই ফিরে আসে; ফিরে আসে রাঢ়বঙ্গের ভূমি , মহামারী, দেশভাগ , সাম্প্রদায়িক অশান্তির চিত্র নিপুন বাস্তবতার সাথে আঁকা হয়ে আছে। ‘আগুন পাখি’ উপন্যাসটির জন্য ২০০৮ সালে লেখক আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হন।
লিখেছেন প্রবন্ধও। গবেষণামূলক কাজ ‘সক্রেটিস’ যার মধ্যে অন্যতম। সাহিত্যকৃতী হিসেবে বাংলা আকাদেমি পুরস্কার, একুশে পদক পেয়েছেন হাসান আজিজুল হক। তাঁর আকস্মিক প্রয়ানে দুইবাংলার সাহিত্য প্রেমীরা শোকস্তব্ধ।