ফুটপাতেই দিন কাটাচ্ছিলেন মহিলা। পরনে জীর্ণ কাপড় , ধুলো মলিন চেহারা, হাতে ময়লা প্লাস্টিকের ব্যাগ দেখে কে বলবে, এই মহিলা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের আত্মীয়া!
ইনি ইরা বসু। বুদ্ধদেব গৃহীনি মীরা ভট্টাচার্যের বোন। অবিবাহিতা। বরাবরই স্বনির্ভর ছিলেন। খড়দার প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা ছিলেন ইরাদেবী। ২০০৯ সালে রিটায়ার করেন। তারপর একদিন সল্টলেকের বাড়ি থেকে নিখোঁজ।
ডানলপের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন দুবছর ধরে। তুখোর ইংরেজি বলেন। ফুটপাতে থাকা সত্ত্বেও হাত পাতেননা কারোর কাছে। ভিক্ষা তো নয়ই, এক কাপ চা পর্যন্ত নয়।এলাকার লোকজন থেকে ট্রাফিক পুলিশ পর্যন্ত তাঁকে চেনে, সমীহ করে। শিক্ষক দিবসে স্থানীয় লোকজনই সম্মাননা দিয়েছেন অশীতিপর এই শিক্ষিকাকে। কিন্তু আত্মীয়তার সূত্র প্রকাশ হয়ে পড়ায় আকাশ থেকে পড়ে সকলেই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকা এই অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন ফুটপাতে? কিন্তু কেন?
সেটা অবশ্য স্পষ্ট করে খুলে বলেননি ইরাদেবী। তবে তিনি স্বনির্ভর হয়ে বাঁচতে চান, বারবার উঠে এসেছে এই কথাটাই। ভদ্রমহিলার কর্মক্ষেত্র প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয় জানিয়েছে, কাগজপত্র ঠিকঠাক জমা না পড়ায় তাঁর পেনশন আটকে রয়েছে। এই কারণেই কি গৃহত্যাগ! ভবঘুরে জীবন বেছে নেওয়া!
খবর পেয়ে ছুটে আসেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জী। লুম্বিনিতে চিকিৎসা ও রিলিফ সংক্রান্ত ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। ইরাদেবী একটু সুস্থ বোধ করতেই বারংবার উচ্চারণ করেছেন অভিষেক ব্যানার্জীর নাম। তিনি জানান,”অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লোক পাঠিয়েছিলেন আমার কাছে। ওরা সব তথ্য নিয়ে গেছেন। বলে গেছেন আমার পেনশনের সমস্যা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটিয়ে দেবেন”।
ইরা দেবী মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর প্রশংসাতেও হয়ে ওঠেন মুখর।
লুম্বিনীতে অবশ্য থাকতে চাননি ইরা দেবী। কর্মক্ষেত্র খড়দাতেই ফিরে যেতে চেয়েছেন। একটু সুস্থ হবার পর আপাতত তিনি সিপিএম নেতা সুদীপ রায়ের বাড়িতে সাময়িক ভাবে আশ্রয় নিয়েছেন।
লুম্বিনিতে থাকাকালীনই তাঁর কথায় জানা যায় সল্টলেকের বাড়িটা ইরাদেবীরই নামে। তাহলে কেন ফিরতে চাননা? জানতে চাওয়ায় একবার তিনি বলে ফেলেন,”ওখানে আমার প্রাণ সংশয় আছে। খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে আমাকে”। এটা কি নিছক ভ্রম! নাকি সত্যিই কোনোরকম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে!
সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। নিজের কথায় বারবারই ইরাদেবী বলেছেন, দিদি জামাইবাবুর কোনো দোষ নেই, কারুর মুখাপেক্ষী হবেননা বলেই স্বেচ্ছায় এই জীবন তার বেছে নেওয়া। কঠোর আত্মমর্যাদা সম্পন্ন এই মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার। এখন ইরাদেবী তাকিয়ে রয়েছেন পেনশন সমস্যা সমাধানের আশায়।