উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের পরই বিস্ফোরণ ঘটালেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। ধোবি আছাড়ে কেচে পাট করে দিলেন ‘কেডিএসএ’-র চার নেতাকে। উক্ত চার নেতাকে ভালোমতই চেনেন বঙ্গবাসী। তাঁরা হলেন– কৈলাশ, দিলীপ, শিবপ্রকাশ ও অরবিন্দ মেনন। প্রবীণ নেতার সাথে টরেটক্কা চলছে বিজেপির তির্যক দুটি মন্তব্য ঘিরে। তার একটা ‘দিদি ও দিদি এবং ‘বারমুডা’।
এদিন উপনির্বাচনে সামগ্রিক ভরাডুবির জন্য তথাগত দায়ী করলেন চার নেতৃত্বকে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতির নিচু মান নিয়েও জোরালো ইঙ্গিত করলেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা। তিনি ট্যুইট করে বলেছেন, “সুর করে ‘দিদি ও দিদি’ ডাকায় যত না ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে মমতাকে ‘বারমুডা’ পরতে বলায়, কারণ এর মধ্যে অশ্লীল ইঙ্গিত আছে”।
উল্লেখ্য, একুশের বিধাসভা নির্বাচনের সময় মমতা ব্যানার্জীর পা ভাঙাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন রাজ্যসভাপতি দিলীপ ঘোষ মেদিনীপুরের এক সভায় দাঁড়িয়ে এই মন্তব্য করেছিলেন। সম্পূর্ণ বক্তব্যটি এখানে তুলে ধরা হল। দিলীপবাবু বলেছিলেন, “প্লাস্টার কাটা হয়ে গেল। ফের ব্যান্ডেজ বাঁধা হয়ে গেছে। আর পা তুলে তুলে সবাইকে দেখাচ্ছেন। শাড়ি পরে এসে একটা পা ঢাকা, একটা খোলা। এমন শাড়ি পরতে দেখিনি। যদি পা’টা বের করে রাখতে হয়, তাহলে শাড়ি কেন? বারমুডা পরলেই পারেন!”
একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এহেন উক্তির প্রত্তুত্তরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, “এমন কুরুচিকর মন্তব্য দিলীপ ঘোষ ছাড়া আর কারুর থেকে প্রত্যাশিত নয়”।
এবার একের পর এক ট্যুইটে তথাগত রায়ও সেই একই ইঙ্গিত করলেন। বঙ্গীয় বিজেপির আরও কিছু রুচিবিরুদ্ধ সংলাপের উল্লেখ করেছেন তিনি। কথায় কথায় “পুঁতে দেবো”, “শবদেহের লাইন লাগিয়ে দেবো”, এগুলো সবই যে মাস্তানিসুলভ কথাবার্তা সেই ইঙ্গিত দিয়েই দিলীপ ঘোষের সমালোচনা করলেন কড়া ভাষায়। পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি প্রশংসার মনোভাব কিছুটা হলেও দেখিয়েছেন বিজেপির এই অভিভাবক নেতা। বলেছেন, “সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ১৮ জন সাংসদ ও ৭৭ জন বিধায়ক সমর্থকদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়নি”।
হেরে যাবার পরেও আত্মসমালোচনার বদলে আস্ফালনের তীব্র নিন্দা করে তথাগত পরিস্কার বললেন, “আমি প্রকাশ্যে বিজেপি নেতাদের সমালোচনা করেছি বলে অনেকে মর্মাহত হয়েছেন। শুনে নিন, নির্বাচনের আগে একটি কথাও প্রকাশ্যে বলিনি। কিন্তু নির্বাচনে ভরাডুবি হবার পরেও যখন দেখা গেল কোনো বিশ্লেষণের চেষ্টা নেই, উল্টে ‘৩ থেকে ৭৭’ বলে নিজেদের পিঠ চাপড়ানো হচ্ছে, তখন বলতেই হল”।
দলের আদর্শ কর্মীদের কাজ করতে বাধা দিয়ে ‘কেডিএসএ’ টিম তাঁদের বলেছিলেন “আপনারা এতদিন কাজ করে কী ছিঁ**ছেন! ” এভাবেই যে দলীয় সংস্কৃতিকে অধঃপাতে নামিয়ে এনেছেন দিলীপ ঘোষ সহ চার নেতা, এক ট্যুইটারে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন তিনি।
পাশাপাশি তথাগত রায়ের যুক্তিযুক্ত দাবি, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে দেশের সমস্ত কোণা এবং পররাষ্ট্রীয় সমস্যা সামলাতে হয়, তাই পশ্চিমবঙ্গের দায় তাঁদের ওপর চাপানো উচিত নয়। ভুল যদি করে থাকেন সেটা ৪ চার নেতা, যাঁরা নির্বাচন পরিচালনা করেছিলেন।
তথাগত রায়ের অনর্গল প্রকাশ্য সমালোচনায় বিজেপির অন্দরমহলে শোরগোল শুরু হয়ে গেছে।