হিন্দুদের প্রতিমা ভাঙাকে কেন্দ্র করে এই মূহুর্তে ভারত-বাংলাদেশ উত্তাল।
ঠিক সেই মূহর্তেই বিতর্ককে আরও উস্কে দিলেন দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলীপ ঘোষ মনে করিয়ে দিয়েছেন শুধু বাংলাদেশ নয় পশ্চিমবঙ্গেও হিন্দুদের ওপর দুষ্কৃতী হামলা ও মূর্তি ভাঙা হয়েছে। তারই সূত্র ধরে শুভেন্দু অধিকারী বাংলার বুদ্ধিজীবিদের খোঁচা মেরে ট্যুইট করে কার্যত বাংলাদেশ প্রশাসনকেই কটাক্ষ করেছেন।
শুভেন্দু বাবুর উদ্দেশ্যে বাংলার “বুদ্ধিজীবি’স”-রাও কিছু প্রশ্ন রাখতে চেয়েছেন — মায়ের নাড়ি কেটে আলাদা করা যমজ দুই দেশের একটিতে কোনো ঘটনা ঘটলে স্বাভাবিকভাবেই অন্যটিতে তার প্রভাব পড়ে। কিন্তু মূর্তি যারা ভাঙছেন , তাদের হৃদয় কি আদৌ এই অনুভূতির স্পন্দনে স্পন্দিত হয়? প্রতিবাদটা কোথায় কাদের বিরুদ্ধে করা উচিত সেটা কিছু সংখ্যক রাজনীতিবিদ বরাবরের মতোই গুলিয়ে দিচ্ছেননা তো? শুভেন্দু কথিত বাংলার “বুদ্ধিজীবি’স”-দের কেউ কেউ প্রশ্ন করতে চান — কাদের সুরক্ষার কথা তাঁরা বলতে চাইছেন, ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায় নাকি ‘হিন্দু’ সম্প্রদায়?
দুু্র্গাপ্রতিমা বিসর্জনের দিন নদীয়া, করিমপুর, কুলটি, পশ্চিম বর্ধমান সহ কিছু বিক্ষিপ্ত ঝামেলার উদাহরণ টেনে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশের তুলনা টেনে আসলে কী মেলাতে চেয়েছেন সেটা অনেকের কাছেই ঠিক পরিস্কার নয়। প্রায় এক সুরেই সুর মিলিয়েছেন দিলীপ ঘোষও।পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় কিছু দুষ্কৃতী হামলা করে প্রতিমা ভেঙেছে এই বিচ্ছিন্ন ঘটনার তুলনা এনে বিতর্ক উস্কে দিয়ে প্রশ্ন করেছেন, “যারা বাংলাদেশের দুর্গাপূজোর উপর হামলা নিয়ে চিন্তিত তারা কি জানেন খোদ পশ্চিমবঙ্গেও এই ধরনের হামলা হচ্ছে…!”
কিন্তু দিলীপবাবু কি জানেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবৃতি দিয়ে ইতিমধ্যে কী বলেছেন! কুমিল্লার ঘটনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে তাদের খুঁজে বার করা হবে। যে ধর্মেরই হোকনা কেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে”।
শুধু তাই নয়, ‘বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশন ‘ পক্ষ থেকেও এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে –“বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের আনন্দোৎসবের জায়গা দখল করল ভীতি ও আশংকা।৩২ হাজারেরও বেশি দুর্গাপূজো হয় বাংলাদেশে। যেখানে প্রত্যেকের আনন্দে মেতে ওঠার কথা, তার পরিবর্তে কুমিল্লার একটি অনভিপ্রেত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে গেল সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা। এই মূহুর্তে আমরা অসহায়, তবু নিঃশর্তভাবে ভাষা, সম্প্রদায় ও সীমানা নির্বিশেষে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক ও মানবিক কর্তব্য “।
ভারতের ‘সংখ্যালঘু’ বলতে দিলীপ বাবু ও শুভেন্দু অধিকারী মহাশয় কাদের ইঙ্গিত করছেন, এবং দুই দেশের ঘটনাকে মিশিয়ে ফেলার কারণটা কী? সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতবিদ ও “বুদ্ধিজীবি’স”-দের একাংশ হিন্দু মৌলবাদকে উত্তেজিত করার গন্ধই পাচ্ছেন।