‘বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নিয়ে নিজেকে বাঙালি দাবি করে পাকিস্তানের জার্সি বা পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করা চলবেনা’ — টেস্ট ম্যাচের শুরুতেই দাবি তুলেছিলেন বাংলাদেশি সমর্থকরা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও বাংলাদেশে এখনও বহু লোক পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন পোষণ করে চলেন, তাদেরই বিরুদ্ধে এদিন স্টেডিয়ামের বাইরে প্রতিবাদ সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন বাংলাদেশের বহু সমর্থক।
টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সোশ্যাল মাধ্যমে এই ইস্যুতে প্রতিবাদে সামিল ছিলেন বাংলাদেশীরা। চট্টগ্রাম টেস্ট সিরিজেও সেই ধারা অব্যাহত রাখলেন ‘বাংলা’-র জাতীয় চেতনা সম্পন্ন সমর্থক দল।
বাংলাদেশ পাকিস্তান টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের শুরুতেই তার প্রতিফলন ঘটল। ‘জাহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে’-র বাইরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে সার বেঁধে দ্বাররক্ষীর ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছিলেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের দল।
যদিও পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদের প্রতি তাঁরা কোনও বিদ্বেষ দেখাননি। সমর্থদের একজন সংবাদ মাধ্যমে জানান, “আপনি যদি পাকিস্তানি নাগরিক হন, ভিসা দেখিয়ে অনায়াসে পাকিস্তানের সমর্থক হয়ে মাঠে ঢুকতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে জন্মেও যারা নিজের দেশ ভুলে পাকিস্তানকে সমর্থন করতে মাঠে ঢুকে আওয়াজ তুলছে, তাদের কোনওমতেই মেনে নেওয়া চলবেনা “।
এই প্রতিবাদ চলাকালীনই জনৈক ব্যক্তি পাকিস্তনের জার্সি গায়ে মাঠে ঢোকার চেষ্টা করলে তাকে পাকড়াও করে গণধোলাই দেওয়া হয়, পালাতে গিয়ে লোকটি রাস্তার ধারে নালায় পড়ে যান, এবং কান ধরে ভুল স্বীকার করলে ওই প্রকিবাদকারীরাই এগিয়ে এসে ব্যক্তিকে উঠে আসতে সাহায্য করেন।
এত কঠোর কেন? প্রশ্ন করলে ইতিহাস ঘেঁটেই উদাহরণ তুলে আনেন এক তরুণ বাংলাদেশি সমর্থক। তিনি বলেন , “১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রকিবুল হাসান জয় বাংলা ব্যাট নিয়ে প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি প্রশাসন ও বোর্ডকর্তারা তাঁর ব্যাটটি কেড়ে নিয়েছিল এবং একাদশ থেকে বাদ দিয়েছিল। কেন? সেই জয় বাংলা ব্যাটটা কী দোষ করেছিল?” প্রশ্ন তোলেন ওই সমর্থক।
১৯৮০ সালে আবারো এই স্টেডিয়ামেই পাকিস্তানের উদ্ধত আচরণে দুদিনের টেস্ট ম্যাচ বানচাল হওয়ার ঘটনা ঘটে। সেদিনের ঘটনায় প্রায় ৪০ জন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম করে জেগে ওঠা ‘বাংলাদেশ’ তাই কোনওমতেই জাতীয়তা বিরুদ্ধ আচরণ সহ্য করবেনা বলেই পণ করে স্টেডিয়ামের বাইরে কঠোর হাতে রুখে দাঁড়ায়।