‘শুধু যাওয়া আসা, স্রোতে ভাসা’ … কবিগুরুর শব্দ ধার করে বললে বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের অবস্থা হয়েছে অনেকটা তাই। এই যাওয়া আসার প্রক্রিয়ায় সম্প্রতি মুকুল রায়কেও ছাপিয়ে গেছেন যে বঙ্গনেতা তিনি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল বা বিজেপি কেউই সঠিকভাবে নির্ধারন করতে পারছেনা তার অবস্থান। রাজীবের দলছুট মনোভাব নিয়ে জল্পনা যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই একটা কান্ড করে বসল বিজেপি। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহল হয়ে উঠল সরগরম।
তার আগে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিত্রনাট্যটায় এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নেওয়া দরকার।
গত বিধানসভা ভোটের আগেই তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে রাজীব যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। সেটাও এমনি এমনিই নয়। তৃণমূল বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর মমতা ব্যানার্জীর ছবি বুকে জড়িয়ে ‘মা’ ‘মা’ বলে রীতিমতো বুকভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মা হারা সন্তান এরপর যোগ দেন ‘পিতৃপক্ষ’ গেরুয়া শিবিরে। তারপর দিন কাটছিল বেশ।
কিন্তু ওই যে কথায় বলে নাড়ির টান! এ যেন ঠিক তাই। উপনির্বাচনের আগে থেকেই ‘মা’এর জন্য আবার কেঁদে ওঠে রাজীবের মন। ঘন ঘন স্যোশাল মিডিয়ায় মমতা ব্যানার্জীর প্রতি নরমে গরমে সমর্থন, বিজেপির সমালোচনা কিছুই নজর এড়ায়নি, সব লক্ষ্য করছে ওয়াকিবহাল মহল।
তাই ‘মা’এর কাছেই ফিরতে পারেন রাজীব, সে সম্ভাবনাই প্রকট হচ্ছিল দিনে দিনে। এমনকি উপনির্বাচনে মমতার রেকর্ড ব্রেকিং জয়ের পর নিজের “আত্মসমালোচনা”-তেই মুখর হয়ে রাজীব বলেছেন, “মানুষের বিপুল জনসমর্থনে জেতা সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতার নামে কথায় কথায় দিল্লী আর ১৫৬ ধারার জু্ুজু দেখালে মানুষ ভালোভাবে নেবেনা”। এরপরও কি আর কোনো সংশয় থাকে, রাজীব কোন দলে!
কিন্তু জল্পনার পিদিমের সলতে আরও একটু উস্কে দিয়ে এবার বিজেপিও উল্টো ঘুঁটি চাললো। ওই ‘পিতার’ অবাধ্য ছেলে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালো ন্যশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটিতে।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আমন্ত্রিত হয়েছেন সাংসদ জয়ন্ত রায়, দেবশ্রী চৌধুরী, রূপা গাঙ্গুলী, বিধায়ক অশোক লাহিড়ী সহ বিজেপির অনেকেই।
কিন্তু রাজীব কেন? সেটাই বুঝতে পারছেননা বিজেপি শিবির তো বটেই, অন্যান্যরাও ধোঁয়াশায়।
এ নিয়ে টিপ্পনী কাটতে ছাড়েননি তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক কুনাল ঘোষ। বলেছেন, “রাজীব এখনও আমার কাছে বিজেপির নেতা। তবে যে বিজেপি নেতা প্রত্যেকদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়ে ট্যুইট করছেন তাঁকেই যদি কমিটিতে রাখতে হয়, তবে এর চেয়ে বিজেপির দেউলিয়া অবস্থা আর কী হতে পারে!”
এখন কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার অপেক্ষা।