“আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর…” মহালয়ার ভোরে এই ধ্বনিতে ঘুম ভাঙার জন্য সারাটা বছর অপেক্ষা করে থাকে আপামর বাঙালি। সেই ১৯৩১ সাল থেকে বেতারে যার সম্প্রচার শুরু, আজ এতগুলো বছর পেরিয়েও যার জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। এই সেই বেতার অনুষ্ঠান ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। আর এর সাথে ওতপ্রোত জড়িয়ে যাঁর নাম তিনি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।
কিন্তু একবার একটি বড় ভুল হয়েছিল, যে ভুলের সাথে জড়িত আরও একটি নাম — মহানায়ক উত্তমকুমার। ওই একটি বছর একটিবারের জন্যই বেতার অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বদলে অনুষ্ঠানে পাঠ করেছিলেন উত্তমকুমার। তারপর যা ঘটেছিল তা ইতিহাস।
১৯৩১ সালে আকাশবাণী প্রথম ‘মহিষাসুরমর্দিনী ‘ গীতিআলেখ্যটি সম্প্রচার শুরু করে। দুই ঘন্টার এই অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা করেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য, সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক এবং ভাষ্যপাঠ ও শ্লোক পাঠ করেন বাঙালির প্রিয়তম বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। অনুষ্ঠানটি বিপুল জনপ্রিয় হয়। তারপর থেকে প্রতিটি বছর মহালয়ার দিন আকাশবাণী ওই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে। কতটা জনপ্রিয়! একটি ঘটনাই তার প্রমাণ।
১৯৭৬ সালের ঘটনা। আকাশবাণী বিশেষ চমক দিতে ঠিক করে বাঙালির মহানায়ক উত্তমকুমারকে দিয়ে অনুষ্ঠান করানো হবে। প্রথমে রাজি না হলেও শেষমেশ অনুষ্ঠানটি করতে রাজি হয়ে যান তিনি। বাঙালি তখন উত্তমকুমার বলতে অজ্ঞান, এতটাই প্রিয়। কিন্তু হেমন্ত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ওই নতুন অনুষ্ঠানে উত্তমকুমারের স্তোত্রপাঠ শুনে রেগে ফায়ার হয়ে বিক্ষোভ জানাতে আকাশবাণী পৌঁছে গেছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। সবার একটাই দাবি ‘বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কোথায়? কোথায় মহিষাসুরমর্দিনী! ‘
বাধ্য হয়ে আবার নতুন করে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে দিয়ে অনুষ্ঠান পুনঃসম্প্রচার করাতে হয়েছিল আকাশবাণীকে। বলা বাহুল্য, উত্তমকুমারও বিনয়ের সাথে তাঁর কাছে নতিস্বীকার করেছিলেন।
তিনি নেই বহুবছর হল। তবু আজও
বাঙালির দূর্গাপূজোর সূচনাই হয় মহালয়ার শারদ প্রাতে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ দিয়ে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর কন্ঠস্বর সময়ের সাথে সাথে প্রতিবছর ধরা দিয়েছে রেকর্ডে, ক্যাসেটে, সিডিতে, এমনকি হাল জমানায় ইউটিউবেও যা খুললেই শোনা যায়।
তবু মহালয়ার দিনে ভোর চারটেয় আকাশবাণী থেকে ভেসে আসে শাঁখের আওয়াজ বেজে ওঠে রোঁয়ায় শিহরণ জাগানো কন্ঠস্বর “আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর…” জেগে ওঠে বাঙালি।
আজ মহালয়ার শুভদিনে ‘ভয়েস ভারত’ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে।