VoiceBharat News vag 1

একরকম পুনর্জন্মই বলা যায়। খুন করে মৃত ভেবে সীমান্তে ফেলে দেওয়া ২৩ বছরের ছেলেটার বাঁচবারই কথা ছিলনা। কিন্তু ঘটনার ফেরে সে বাঁচল , এবং সুস্থ হয়ে নতুন করে দেশে ফিরল আবার।
বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত মৌলভীবাজারের টিলাগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহজাহান নেহাত তরুণ বয়সের ছেলে। ওরসের মাহফিলে যাচ্ছি বলে বেরিয়ে আর ফেরেনি। নিখোঁজ হওয়ার ৩ বছর পর ভারতের হাসপাতালে খোঁজ মিলল তার। জানা যাচ্ছে, পারিবারিক বিবাদের জেরে দুই মামা তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। নৃশংস আক্রমণ করে একরকম মৃত ভেবেই সীমান্ত এলাকায় কাঁটা তারের নিচে ফেলে দিয়ে যায়। কিন্তু তারা জানতোনা, শাহজাহানের জীবনপ্রদীপ তখনও নিভে যায়নি।

VoiceBharat News vag


শাহজাহানের জবানবন্দী ও তদন্ত সূত্রে জানা যায়, বাবা-মায়ের পারিবারিক ঝগড়া অশান্তিতে বাবা মানিক মিয়ার পক্ষ নিয়েছিল শাহজাহান, সেই আক্রোশেই শাহজাহানের মামারা অর্থাৎ ফুরকান মিয়া, ওয়াছিন মিয়া, মোবাশ্বির মিয়া এবং ইয়াছিন মিয়া ভাগ্নের ওপর ক্রুদ্ধ হন। সেই রাগের জেরে মামারা প্রায়শই তাকে খুনের হুমকি দিয়ে ভয় দেখাত।

২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি কামালপুরের একটি মাজারে ওরস মাহফিলে যায় শাহজাহান। সেখান থেকেই তাকে কব্জা করে রাত ২ টোর সময়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে জনশূন্য এলাকায় নিয়ে যায় শাহজাহানের চার মামা। বেধড়ক পেটানোর পর ফুরকান মিয়া তার গলায় দা দিয়ে কোপ মারতে গেলে ফসকে কাঁধের ওপর কোপ পড়ে ডান হাতটি কেটে পড়ে যায়। এরপরও বাকি তিন মামা লাগাতার ছুরির কোপে কান কেটে, বুক কুপিয়ে রক্তাক্ত নিথর দেহটাকে শরিফপুর ইউনিয়নের চাতলাপুর সীমান্তের কাঁটাতারের ভেতরে ভারতীয় অংশে ফেলে রেখে চলে যায়। মরে গেছে জানাই ছিল, কেননা এমন নৃশংস আক্রমণের পর প্রাণ থাকা সম্ভব নয়।

VoiceBharat News 2021 2largeimg27 Feb 2021 230127367


কিন্তু শাহজাহান মরেনা। সীমান্তে টহলদার বিএসএফ জওয়ানরা দেখতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ অর্ধমৃত শরীরটাকে কৈলাশহর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেই হাসপাতালেই টানা ১ বছর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর উন্নতির জন্য আগরতলার মডার্ন সাইক্রিয়াটিক হসপিটালে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত এই হসপিটালে ধীরে ধীরে শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতির পর অবশেষে তার জ্ঞান ফিরে আসে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সহযোগিতায় বাড়ির লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে শাহজাহানকে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।


ভারতের ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ সীমান্তে পুনর্জন্ম প্রাপ্ত শাহজাহানকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার সময় নো ম্যান্স ল্যান্ডে বাংলাদেশের সহকারী কমিশনার মহম্মদ জোবায়েদ হোসেন ও সামরিক বাহিনীর উচ্চ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


মামাদের ভয়ে বাড়িতে ফেরানো হয়নি শাহজাহানকে। সে তার ফুফু অর্থাৎ পিসি রূপজান বিবির বাড়িতে উঠেছে, সেখানেই রয়েছে এখন। ছেলেকে জীবন্ত ফিরে পেয়ে বাবা মানিক মিয়া যেন হাতে সত্যিকারের হারানো মানিক ফিরে পেয়েছেন।


কিন্তু এত নিষ্ঠুর কীকরে হয় মানুষ? সেই প্রশ্নেই সোচ্চার হয়ে শাহজাহানের পিসি রূপজান বিবি দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই মৌলভীবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ৫ নম্বর আমলী আদালতে শাহজাহানের চার মামা এবং সিএনজি অটোচালকের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।

By Partha Roy Chowdhury (কিঞ্জল রায়চৌধুরী)

Partha Roy Chowdhury (Bengali: কিঞ্জল রায়চৌধুরী) is staff journalist VoiceBharat News. email: kinjol@voicebharat.com