সম্প্রতি প্যারিস স্কুল অফ ইকনমিক্সের অধীনস্থ একটি সংস্থার সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে– অর্থনৈতিক ও লিঙ্গ বৈষম্য চরমে। মোদী সরকারের আমলে সেই বৈষম্য কমেনি উল্টে আরো বেড়েছে। এই রিপোর্ট তৈরির দায়িত্বে ছিলেন ফ্রান্সের অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি। যে রিপোর্টের ভূমিকা লিখেছেন ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার ডুফলো।
প্যারিস স্কুল অফ ইকনমিক্সের অন্তর্গত World Inequality Lab(বিশ্ব অসাম্য)-এর ২০২১ সালের রিপোর্টের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে, ‘ভারতের মোট আয়ের ৫ ভাগের ১ ভাগই দেশের এক শতাংশের কাছে। এতে ধনীরা আরও ধনী, এবং দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়েছেন।
রিপোর্টেে ভূমিকায় অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “বিশ্বের যেসকল দেশে অসাম্য চরমে, ভারত এখন তাদেরই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।”
শুধুই অসাম্য নয়, ভারত নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে তথ্যগত পরিসংখ্যানের গোঁজামিলের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। সাম্প্রতিক রিপোর্টে তাঁরা বলেছেন, “বিগত তিন বছরে অসাম্য নিয়ে সরকার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তার গুনগত মান অত্যন্ত খারাপ। ফলে অসাম্যের ছবি কতটা বদলেছে তা নির্ধারণ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ”
রিপোর্টে আরো দেখানো হয়,’কোভিড সঙ্কট চলাকালীন সারা বিশ্বের বিলিয়নেয়ার অর্থাৎ কোটিপতিদের সম্পত্তির পরিমাণ দ্বিগুন ফুলেফেঁপে উঠেছে। বিশ্বের মাত্র ২,৭৫০ জন ধনকুবেরের হাতে পৃথিবীর ৩.৫ শতাংশ সম্পদ রয়েছে।’
আয়ের নিরিখে পরিসংখ্যান বলছে, ‘নিচের তলার অর্ধেক মানুষের বার্ষিক গড় আয় ৫৩,৬১০ টাকা। আর ওপরতলার মানুষের ১০ শতাংশের আয় তার প্রায় ২০ গুণ বেশি। তেমনই সম্পত্তির নিরিখে, কতিপয় ব্যক্তি উচ্চস্থানে রয়েছেন, তার বিপরীতে নিচের সারির মানুষরা তো বটেই এমনকি মধ্যবিত্তদের আর্থিক অবস্থাও রীতিমতো নিচের দিকে নেমে এসেছে।
অর্থনৈতিক অসাম্যের পাশাপাশি ভারতে চরম লিঙ্গবৈষম্যের দিকেও ইঙ্গিত করে ‘বিশ্ব বৈষম্য রিপোর্টে’ বলা হয়েছে, ‘দেশের মোট আয়ের নিরিখে মহিলা শ্রমিক ও কর্মীদের আয়ের ভাগ মাত্র ১৮ শতাংশ’।
এর আগেও ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বলেছিলেন, সামগ্রিক বিচারে দেশের অধিকাংশ মানুষের কষ্টকর অবস্থা চরমে। এই রিপোর্টেও দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখানো হয়েছে, ভারত ও চীন দুই দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে বেসরকারীকরণের উদারনীতি দুই দেশকেই বৈষম্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।