তাঁর লোকসভা এলাকায় ধর্নার কর্মসূচি, অথচ তিনিই জানেননা! সেটাও এমনই এক সময়ে, যখন পুরভোট আসন্ন। দলের এই হঠকারী সিদ্ধান্তেই এবার ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বিজেপির একনিষ্ঠ নেত্রী , সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। বিজেপির মতে লকেট নিজেই রাজ্যের কর্মসূচিতে আগ্রহী নন। ওদিকে পান্ডুয়ার দেয়াল ঘিরে ছড়িয়ে পড়ল ‘নিখোঁজ’ লেখা সন্ধান চাই পোস্টার। দলেরই ষড়যন্ত্র, নাকি বাইরের লোকের কাজ! এই নিয়েই হুগলির বিজেপি শিবিরে কানাঘুষো আলোচনা।
সিঙ্গুরে অনুষ্ঠিত কৃষক ধর্না প্রসঙ্গে লকেট তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, “এখন কলকাতা পুরভোটের প্রচার চলছে। সংসদে অধিবেশনও চলছে। এই সময় সিঙ্গুরে কেন ধর্না কর্মসূচি নেওয়া হল আমি জানিনা। আমার মনে হয় আর কটা দিন অপেক্ষা করে আমি রাজ্যে ফিরলে এই কর্মসূচি নেওয়া যেত।”
প্রসঙ্গত, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দেওয়া কাজের দায়িত্ব নিয়েই লকেট চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে উত্তরাখন্ডে রয়েছেন। তবে সিঙ্গুরে শুভেন্দু অধিকারীর ডাকে ধর্না কর্মসূচি নেওয়ার আগে লকেটকে জানাবার প্রয়োজন মনে করেনি দল, এতে তিনি খুবই অবাক হয়েছেন। প্রকাশ্যে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দেওয়ায় অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি।
সিঙ্গুরে তিন দিনের কৃষক বিক্ষোভে শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার থাকলেও, জন সমাগম খুব একটা হয়নি বলেই স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তেমনই ছিলনা কৃষকদের উপস্থিতি। যদিও কর্মসূচির মূল দায়িত্বে থাকা সায়ন্তন বসু দাবি করেছেন, “করোনা বিধি মেনে সভা হচ্ছে। প্রায় পাঁচশো লোক ছিলই। এটাকে কোনও ভাবেই ফ্লপ বলা যাবেনা। যাঁরা বলছেন তাঁরা সমালোচনা করার জন্যই বলছেন।”
কিন্তু লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য সম্পর্কে মতামত কী? এর জবাবে সায়ন্তন বসুও কিছুটা পাশ কাটান। তিনি বলেন, “দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই কর্মসূচির দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই কলকাতা পুরভোট বা সংসদের অধিবেশনের সময়ে কেন এই ধর্না, সেটা আমি বলতে পারবনা।”
সায়ন্তন বসু যাই বলুন না কেন, বিজেপি শিবিরে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীরাই একরকম প্রচার করে দিয়েছেন ধর্না কর্মসূচি তেমন সফল হয়নি, এবং তার জন্য এলাকার সাংসদ লকেটকে এড়িয়ে যাওয়াই কারণ, এমনও বলেছেন।
সবকিছু ঠিকঠাক করে তারপর ফোন করে লকেটকে এবিষয়ে জানানো হয়। লকেট বলেছেন ,”সংসদে আমি হুইপ, সুতরাং আমার পক্ষে এখন দিল্লী ছাড়া সম্ভব ছিলনা। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি দিয়ে চারদিনের জন্য আমি উত্তরাখন্ডে এসেছি। আগে থেকে জানলে আমি সিঙ্গুরেও একদিনের জন্য অংশ নিতে পারতাম। ”
লকেট চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন দলের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করতেই তিনি উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হিসেবে গিয়েছেন। যদিও রাজ্যের বিজেপি নেতারা লকেটের এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে উল্টে দাবি করেছেন, লকেট ইদানিং রাজ্যের কোনও কর্মসূচিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেননা। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, “লকেট এই রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক। সেটাও দলেরই দেওয়া দায়িত্ব। কিন্তু সেটা ছেড়ে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেতে চাইছেন তাই তাঁকে রাজ্যের কোনও কর্মসূচিতে পাওয়া যাচ্ছেনা।”
আসলে বিধানসভা নির্বাচনে চুঁচুড়ায় হারবার পর থেকেই রাজ্যের কর্মসূচিতে তাঁর আগ্রহ নেই। এমনকি পুরনির্বাচনের সময়েও অংশ নেননি। তাই এবারে সিঙ্গুরের কৃষক বিক্ষোভে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব, দলের একাংশের তাই মত।
এরই মধ্যে কৃষক ধর্নায় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি নিয়ে ‘নিখোঁজ’ লেখা পোস্টার ছড়িয়ে পড়ল হুগলীর পান্ডুয়ায়। দলের তরফে এটা তৃণমূলের চক্রান্ত বলা হলেও, সাধারণ মানুষজন অথবা বিজেপির অন্দরের কেউই করে থাকতে পারেন, এমনটাও অনেকে মনে করছেন।