সম্প্রতি শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের বংশধর বলে দাবি করে দিল্লী হাইকোর্টে পিটিশন জমা দিলেন এক মহিলা। উত্তরাধিকার সূত্রে লাল কেল্লার দখল চান তিনি। এই মামলার কথা শুনে সকলেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন! গতকালই বিচারপতি রেখা পল্লীর একক ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়েছে।
সুলতানা বেগম নামের ওই মহিলা দাবি করেন তাঁর স্বামী মির্জা মহম্মদ বেদার বখত, শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নাতি। অর্থাৎ সম্পর্কের হিসেবে শাহ জাফরের নাতির বউ সুলতানা বেগম। এই মর্মেই দিল্লী হাইকোর্টের কাছে দেওয়া পিটিশনে তিনি অভিযোগ জানান, ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা তিনি তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মাননীয় উচ্চ ন্যায়ালয় যেন লালকেল্লায় তাঁর প্রাপ্য সম্পত্তি পেতে তাঁকে সহায়তা করেন। তিনি ভারতীয় সরকারের কাছে সুবিচার চান।
স্বাভাবিক ভাবেই এ মামলার ধরন দেখে অত্যাশ্চর্য অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন দিল্লী হাইকোর্টের বিচারক সহ প্রত্যেক নাগরিকবৃন্দ। তবে পিটিশন যখন জমা পড়েছে, মামলার শুনানি তো হতেই হবে। বিচারপতি রেখা পল্লী বৃদ্ধা সুলতানা বেগমের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘মুঘল সম্রাটের বংশধর হয়ে সম্পত্তির দাবি করতে ১৩৬ বছর লেগে গেল কেন?’
এছাড়াও বিচারপতি বলেন, ‘শেষ সম্রাটের নাতিবউ হিসেবে আপনি বংশতালিকার কোনওরকম প্রমাণও দেখাতে পারছেননা। যেখানে ১৮৫৭ সালে তাঁর নির্বাসনের সময় এবং তার পরেও কোনও দাবিদার এগিয়ে আসেননি। তখন প্রায় ১৫০ বছর পর এই উত্তরাধিকার নিয়ে কীকরে মীমাংসা করা যায়!’
বলা বাহুল্য, এই দুটি যুক্তি দেখিয়েই সুলতানা বেগমের মামলা খারিজ করে দিয়েছে দিল্লী হাইকোর্ট। তবে এহেন অদ্ভুত অপ্রত্যাশিত একটি মামলা আদালতকেও বিস্ময়ে তাক লাগিয়ে ছেড়েছে!
প্রসঙ্গত, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর বিজয়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তথা ব্রিটিশ সরকার ভারতের শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে মায়ানমারে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়। এই সংগীতপ্রেমী-সুকবি মুঘল সম্রাট শেষ বয়সে নির্বাসিত অবস্থাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শুরু হয় ভারতবর্ষের আর এক কালো অধ্যায়।