আজ বিজয়া দশমী। এবারের মতো দুর্গাপূজো ২০২১-এর এটাই শেষদিন। এইদিনে বাড়ি অথবা বারোয়ারির সিঁদুর খেলা ও মিষ্টিমুখের পাশাপাশি চট করে বাকি থেকে যাওয়া পূজো প্যান্ডেলগুলো ঘুরে আসতেও চান অনেকেই। যে কারণে দশমীর পরেও বিসর্জনের জন্য ২টো দিন বাড়তি অনুমতি দেওয়া হয়।
যদি এখনও কোনো পূজো দেখা বাকি থাকে চটপট সেটা সেরে ফেলবেন অনেকেই। যদি দক্ষিণ কলকাতার পরিক্রমায় যান, তাহলে কালীঘাটের ‘নেপাল ভট্টাচার্য্য স্ট্রিট’-এর দুর্গাপূজো দেখতে ভুলবেননা। একবার দর্শন করলে শেষ দিনের পরেও এ মন্ডপ দর্শনের রেশ থেকে যাবেই আশা করা যায়।
চারিদিকে পূজোর থিমের রমরমার ভিড়ে বিশেষ কিছু আলাদারকম দেখতে চাওয়া আপনার চোখ কখন যে টেনে নেবে এই মন্ডপ তা বুঝতেই পারবেননা! জানতেও পারবেননা একটা পুরোনো গলির পুরোনো বাড়িগুলোর পাশ দিয়ে যেতে যেতে কখন অজান্তেই মন্ডপে ঢুকে পড়েছেন!
বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘের পূজো পার হয়েই দর্শনার্থীরা ‘নেপাল ভট্টাচার্য্য স্ট্রিট’- এর পূজোর দেখা পাবেন। এবার তাদের ৪২ তম বছর পূর্ণ হলো। প্রবেশ পথের দুপাশে এই ক্লাবের নানা সামাজিক কাজকর্মের ছবি দেখতে দেখতে যতই আপনি মন্ডপের দিকে এগোতে থাকবেন, দেখতে থাকবেন আলো আঁধারি গলির দুপাশে থম মেরে থাকা একশো বছরের পুরোনো বাড়ির পোড়া ইঁটের দেয়াল — ততক্ষণে অজান্তেই প্রবেশ করে ফেলেছেন পূজোমন্ডপ প্রাঙ্গণে। সত্যিকারের দেয়ালের রঙের সাথে অঙ্গাঙ্গী মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে থার্মোকলের দেয়াল।
লাল বারান্দায় শুয়ে থাকা কুকুরগুলো রোজকার মতোই রয়েছে স্বাভাবিক। কোনো বাড়ির খড়খড়ি দেওয়া সবুজ জানলার পাশেই উঁকি দিচ্ছে রাধাকৃষ্ণ মন্দির। আর মাথার ওপরে এখনও অক্ষত রয়ে গেছে বনেদী বাড়ির প্রাচীন কড়িকাঠ।
আসল বাড়িগুলোর সাথে এই মন্ডপের বাড়ির আদল মিশে গেছে এমনভাবেই যে, আসল নকল ধরতে পারা কঠিন। দুর্গাও তাই এই বাড়িরই এক মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত। দর্শন ও প্রণাম সেরে যখন আপনি হেলে পড়া দেয়ালের পাশ দিয়ে পরের গলিতে গিয়ে উঠবেন, মন বলে উঠবে — আরও একবার ঘুরে আসি, যাই! হয়তো তখন পরের মন্ডপ দর্শনের জন্য মন উসখুস! তবু মিনিট পাঁচেক থম মেরে দাঁড়িয়ে ভাবতেই হবে।