জঙ্গি অনুপ্রবেশ সন্দেহে গুলিচালনায় মৃত ১৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীদের মর্মান্তিক ঘটনায় অগ্নিগর্ভ নাগাল্যান্ড। অসম রাইফেলসের তরফে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা মারফত জঙ্গিহানার খবর পেয়েই তাঁরা অভিযান চালান। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে , অভিযান চালানোয় এবিষয়ে সেনা জওয়ানেরা পুলিশকে কোনওরকম আগাম সতর্কতা জানাননি। এই মর্মে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। অপরপক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই ঘটনাকে নেহাত ভুল বোঝাবুঝি বলেই বিবৃতি দিয়েছেন।
নাগাল্যান্ডের মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত টিরু গ্রামে প্রায়ই জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে। এদিনও তেমনই গোপন খবর পাওয়া যায় বলে জানায় অসম রাইফেলস। কিন্তু সেই সন্দেহে যাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হল তারা নিরীহ গ্রামবাসী। কয়লা খনির কাজ সেরে তারা ঘরে ফিরছিলেন। তখনই অতর্কিতে হামলা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিতেও এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, সন্দেহের বশে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছিল আচমকাই। সাথে সাথেই ৬ জন প্রাণ হারান। এরপরই জানা যায়, গুলিতে নিহতরা জঙ্গি নয়, সাধারণ গ্রামবাসী। যে সূত্র ধরে পুলিশও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এনডিটিভি মারফত নাগাল্যান্ড পুলিশের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘গুলির শব্দ শুনে পুলিশ গিয়ে দেখতে পায় সেনাবাহিনীরা লাশগুলো ট্রাকে তুলছেন।’
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জাতীয় রাজনীতিতে সমালোচনার ঝড় উঠে যায়। কংগ্রেস থেকে শুরু করে সমস্ত দলের পক্ষ থেকে সুবিচারের দাবি তোলা হয়। গতকালই কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। নিহতদের পরিবার অবশ্যই সুবিচার পাবে।”
তারপরেই সংসদের বিবৃতিতে অমিত শাহ বলেন, “সম্পূর্ণ ভুল বোঝাবুঝি থেকেই সেনাবাহিনী গুলি চালায়। তাতে ৬ জন মারা যান। কিন্তু এরপরেই গ্রামবাসীরা খবর পেয়ে সেনাক্যাম্পে পাল্টা হামলা চালায়, গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়, আর তখন বাধ্য হয়েই সেনাবাহিনীকে আত্মরক্ষার্থে আাবার গুলি চালাতে হয়। বাকি মৃত্যুগুলি এভাবেই ঘটেছে।”
তবে সেনাবাহিনীর আত্মরক্ষার সপক্ষে যুক্তি থাকলেও প্রশ্ন তুলেছে নাগাল্যান্ডের পুলিশ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং বলেছেন, “নিরীহ গণহত্যার কোনও ক্ষমা বা অজুহাত হয়না। সভ্য সমাজে নিরাপত্তা বাহিনীর তরফে এমন নৃশংসতা অকল্পনীয়। “
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিউ ৬ সদস্যদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি নিহত গ্রামবাসীদের পরিবার পিছু ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিউ।