চীনের গাঞ্জোতে পাওয়া ডাইনোসরের এই অত্যাশ্চর্য ভ্রূণটি নিয়ে ১০ বছর ধরে কেউ মাথা ঘামাননি। এতদিন সেটি গুদামেই পড়েছিল। সম্প্রতি মিউজিয়ামের নতুন বিল্ডিং তৈরির জন্য অন্যান্য সংরক্ষিত বস্তুর সাথেই হাতে আসা বেশকিছু পুরনো ফসিল অর্থাৎ জীবাশ্ম নেড়েচেড়ে পরখ করে দেখছিলেন বিজ্ঞানীরা। আর তার মধ্যে থেকেই বিশেষ প্রজাতির এই ডাইনোসরের ভ্রূণটির কথা মাথায় আসে।
পরীক্ষা করতে গিয়ে গবেষকরা চমকপ্রদ সব তথ্য আবিষ্কার করেছেন, যা এই ডাইনোসরের প্রকৃতি তো বটেই, আরো অজানা তথ্য সামনে এনে দিল।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এই ভ্রূণ প্রায় ৬.৬ কোটি বছরের পুরোনো বলেই গবেষকদের অনুমান। প্রজাতির শ্রেণী ভিত্তি অনুযায়ী এই এটি দাঁতহীন ডাইনোসর অর্থাৎ ওভিরাপ্টোরোসর বলে চিহ্নিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে অবাক হয়েছেন ভ্রূণের অবস্থা দেখে। ড.ফিওন ওয়াইসুম জানান, “এই ভ্রূনটি এতদিনে খুঁজে পাওয়া ডাইনোসোরের ভ্রূণগুলির তুলনায় সবচেয়ে ভালো কন্ডিশনে রয়েছে।” গবেষকরা এই ভ্রূণের নাম দিয়েছেন বেবি ইংলিয়াং।
সবচাইতে নতুন যে তথ্যটি এই ভ্রূণ পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন তা হল — ডাইনোসর এবং পাখিদের মধ্যে মিল সম্পর্কিত সূত্র। গবেষকরা জীবাশ্মে ভ্রূণের বিশেষ অবস্থানকে ‘টাকিং’ বলে উল্লেখ করছেন। যে অবস্থা পাখিদের ক্ষেত্রে ডিম ফোটবার ঠিক আগের মূহুর্তে থাকে। এক গবেষক এই অবস্থার মিল ব্যাখ্যা করে বলেন, “এই বিশেষ অবস্থান এটাই ইঙ্গিত করছে, আধুনিক পাখিদের নির্দিষ্ট কিছু ধরণের আচরণ তাদের ডাইনোসর পূর্বপুরুষদের মধ্যেই প্রথম বিকশিত হয়েছিল।” উল্লেখ্য, এই ডাইনোসরের ভ্রূণটির শরীরে পালকের অবস্থিতি চিহ্নিত করা গেছে।
পরীক্ষায় আরো জানা যাচ্ছে, আনুমানিক ৬ থেকে ১০ কোটি বছর আগে এই বিশেষ ‘ওভিরাপ্টোরোসর’ প্রজাতির ডাইনোসর এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় বসবাস করত। বিশিষ্ট জীবাশ্ম বিজ্ঞানী প্রফেসর স্টিভ ব্রুসেট ট্যুইটারে এই ভ্রূণটির ছবি দিয়ে বলেছেন,”এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং আশ্চর্য ডাইনোসরের ভ্রূণ এই বেবি ইয়াংলিং। ভ্রূণটি একেবারে ‘হ্যাচিং’এর সীমায় পৌঁছেছিল।”
২৭ সেন্টিমিটার লম্বা এই ভ্রূণের জীবাশ্ম বর্তমানে চীনেরই বিখ্যাত স্টোন নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে।