দু-দুবার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা। সেবার ঘটেছিল নাগাল্যান্ডে। একটুর জন্য বেঁচে ফিরেছিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান। তবে এবারের দুর্ঘটনা ভয়াবহ। বাঁচানো গেলনা, সস্ত্রীক প্রয়াত হলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিফ অফ ডিফেন্স বিপিন রাওয়াত। কীকরে ঘটল এই রহস্যজনক দুর্ঘটনা! চলছে তারই অনুসন্ধান।
বুধবার দিল্লী থেকে বায়ুপথেই সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত সস্ত্রীক তামিলনাড়ুর সুলুরে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। এরপর সুলুর থেকে নীলগিরির ওয়েলিংটনে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। সুলুরের এয়ারবেস থেকে নীলগিরি যাওয়ার পথেই ঘটে যায় ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
কুন্নুরের একটি চা বাগানে আছড়ে পড়ে হেলিকপ্টার। সাথেসাথেই আগুন ধরে যায়। এই দুর্ঘটনায় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত এবং তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত সহ মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নীলগিরির চাবাগানে কীকরে আছড়ে পড়ল ওই হেলিকপ্টার? তল মিলছেনা কিছুতেই। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৮৮০ মিটার উঁচু তামিলনাড়ুর ওয়েলিংটনে যাওয়ায় সময়, দুপুর ১২:৪০ নাগাদ নীলগিরির একটি চাবাগানে অকস্মাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হেলিকপ্টারটি আছড়ে পড়েই দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়।সকালে কুয়াশাপূর্ণ ছিল নীলগিরি অঞ্চল, সেই কারণেই কি দুর্ঘটনা! নাকি অন্য কোনও কারণ?
উদ্ধারকার্য চালিয়ে অগ্নিদগ্ধ, আহত অবস্থায় সেনাপ্রধান ও তাঁর স্ত্রী সহ ১৩ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর প্রত্যেককেই মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তবে অনেকের মরদেহকেই এখনও শনাক্ত করা যাচ্ছেনা।
তবে তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান, ওই হেলিকপ্টারে সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াক ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকা ছাড়াও সফরসঙ্গী হিসেবে সফর করছিলেন –ব্রিগেডিয়ার এল এস লিড্ডর, নায়েক গুরুসেবক সিং, নায়েক জিতেন্দ্র কুমার, ল্যান্স নায়েক বিবেক কুমার, বি সাই তেজা, হাবিলদার সৎপাল ছাড়াও ৬ জন। প্রত্যেককে শনাক্তকরণের জন্য চিকিৎসকরা ডিএনএ টেস্টের সাহায্য নিচ্ছেন, এতটাই খারাপ অবস্থা।
তবে চিফ অফ ডিফেন্স বিপিন রাওয়াতের সাথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও ২০১৫ সালে নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর অঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল ভারতীয় সেনাপ্রধানের হেলিকপ্টার ‘চিতা’। ২০ ফুট উচ্চতা থেকে পাহাড়ী এলাকায় আছড়ে পড়লেও আহত সেনাপ্রধান বেঁচে ফিরেছিলেন। তবে এবারের দুর্ঘটনায় প্রাণরক্ষা হলনা।
বুধবার ভারতীয় সেনাপ্রধানের অকস্মাৎ মর্মান্তিক প্রয়ানে গভীর শোকপ্রকাশ করে ট্যুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “জেনারেল বিপিন রাওয়াত অসাধারণ জওয়ান ও একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ছিলেন। দেশের সশস্ত্রবাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকীকরণে ব্যাপক উন্নতিসাধন করেছিলেন। তাঁর প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। ওম শান্তি। ”
উল্লেখ্য, বিপিন রাওয়াতই প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদে উন্নীত হয়েছিলেন। এই পদ তাঁরই জন্য তৈরি হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন ,”ভারতের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ হিসেবে প্রতিরক্ষা বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন দিক নিয়েও উনি কাজ করছিলেন। তাঁর অবদান ভারত কখনও ভুুলবেনা।”