মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অ্যাকাডেমি পুরস্কার দেওয়া নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ২৫ বৈশাখ এই পুরস্কার ঘোষণার পরেই সাহিত্য অ্যাকাডেমির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস। অন্নদাশঙ্কর রায় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ জানান লেখিকা রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই সোচ্চার প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন পবিত্র সরকার, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেন প্রমুখ সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবিরা।
প্রত্যেকেই একই বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে জানিয়েছেন –‘এই পুরস্কারের ফলে বাংলা অ্যাকাডেমির মর্যাদা নষ্ট হয়েছে।’ পাশাপাশি ব্রাত্য বসুর বক্তব্যেরও পাল্টা প্রশ্নও তোলা হয়।
বাংলা অ্যাকাডেমির সভাপতি ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, “বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের নিয়ে গঠিত জুরি বোর্ডের মতামত নিয়ে তবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।” সাধারণত সেটাই হয়ে থাকে। তবে পবিত্র সরকার, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেন, কুন্তল মুখোপাধ্যায় , আজিজুল হক, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সহ লেখক কবি শিল্পি সাহিত্য সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন কারা ‘ছিলেন এই জুরি বোর্ডে! তাদের তালিকা সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।’ একটি খোলা চিঠির মারফত এই দাবি তুলেছেন তাঁরা।
‘বিভিন্ন স্তরে কাজের পাশাপাশি’ ‘নিরলস সাহিত্য সাধনা’ এবং ‘বিশেষ পুরস্কার’ এই শব্দবন্ধগুলির কার্যত বিরোধিতা করেই মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া পুরস্কারের বিপক্ষে আওয়াজ তুলেছেন তাঁরা। খোলা চিঠির লিখিত বয়ান অনুযায়ী, “পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণের সম্পত্তি। জনসাধারণের কাছে সরকার দায়বদ্ধ আকাদেমির কার্যকলাপ পরিচালনার বিষয়ে।”
চিঠিতে আরো বলা হয়,”যে ভাবে পুরস্কার দেওয়া হল, তাতে আমরা মনে করি আকাদেমির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সাহিত্যের ঐতিহ্যকে চূড়ান্ত অসম্মান করা হয়েছে এবং সরকারি ক্ষমতার গুরুতর অপব্যবহার করা হয়েছে।”
ইতিমধ্যেই কয়েকজন বিদ্বজ্জনের নাম প্রকাশ্যে এসেছে, যাঁরা কমিটির সদস্য হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরস্কার নির্বাচনে মতামত দিয়েছিলেন। এই নামগুলি যথাক্রমে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, আবুল বাশার, সুবোধ সরকার, শ্রীজাত, প্রচেত গুপ্ত, অভীক মজুমদার, অর্পিতা ঘোষ, প্রসূন ভৌমিক, পাবলিশার্স গিল্ডের কর্তা সুধাংশুশেখর দে, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। বিরোধীদের খোলা চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, ‘কোন প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে পুরস্কার দেওয়া হল, তার ব্যাখ্যা দিয়ে জনসাধারণকে জানানো হোক।’
এই তুমুল বিতর্কটিকে যদিও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলা অ্যাকাডেমির সভাপতি ব্রাত্য বসু ‘বাঙালির ইর্ষাজনিত মনোভাব বলে’ কটাক্ষ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “পৃথিবীর সব পুরস্কারেই বিতর্ক রয়েছে। কোনও পুরস্কারই অবিতর্কিত নয়। প্রশ্ন ছিল বব ডিলানের নোবেল নিয়েও। পদত্যাগের ঘটনা নোবেলেও রয়েছে। নোবেল পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথও কথা শুনেছিলেন।”