রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয়ই ছিলেন আমতার আনিস খান। কিন্তু কোন দল করতেন তিনি? সেটা এখন আর স্পষ্ট নয়। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একাধিক প্রমাণ দেখিয়ে বিজেপি ছাড়া প্রায় সব দলই দাবি করছে আনিস খান তাদের সাথে যুক্ত ছিলেন। এটা কীকরে হয়?
ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যু পুলিশেরই হাতে, এমন তথ্য যখন সামনে আসতে শুরু করেছে, মৃত্যু রহস্যে সামান্যতম আলোকপাতের চেষ্টা চলছে এমন সময়ে আনিসকে নিজেদের বলে প্রমাণ করতে সচেষ্ট প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দল। এই গন্ডগোলের সূত্রটা হয়তো কিছুটা আনিস নিজেই তৈরি করেছিলেন।
শুরুতে বামসংগঠনের ছাত্রশাখার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, পরে তিনি আইএসএফ দলের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন — এটা একেবারে প্রকাশ্য তথ্য। কিন্তু এখন জানতে পারা যাচ্ছে, আনিস খানের সঙ্গে প্রায় সব রাজনৈতিক দলেরই সখ্যতা ছিল।
গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনিসের মৃত্যুর স্বচ্ছ তদন্তের পক্ষে সোচ্চার হয়ে আনিসকে তাঁর ‘ফেভারিট ছেলে’ বলে উল্লেখ করে জানান, গত বিধানসভা নির্বাচনে ছেলেটি তাঁদের সাহায্য করেছেন। বাম ছাত্রসংগঠন এসএফআইও জানিয়েছে আনিস তাদের দলে যুক্ত ছিল। সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা বলছেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংযুক্ত মোর্চার ব্রিগেড সমাবেশে যোগদান করেছিলেন আনিস। ও আমাদের সদস্য ছিল।” মহম্মদ সেলিমের সাথে আনিসের একটি ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়া হয়েছে, তাছাড়াও বামসংগঠনগুলির ফেসবুক পেজ আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে ছয়লাপ হয়ে উঠেছে। ওদিকে কংগ্রেসও দাবি তুলেছে আনিস খান ছাত্রপরিষদের সদস্য ছিল।
আনিসের দাদা এবং প্রতিবেশিদের বক্তব্যে জানা যাচ্ছে, আনিস খান নৌশাদ ও আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফ-এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন এবং এলাকায় সংগঠন বিস্তারে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু মুশকিল হলো বিজেপি ছাড়া প্রায় সমস্ত দলই কিছু না কিছু সাক্ষ প্রমাণ দেখাচ্ছে যাতে এটা স্পষ্ট — আনিস খানের সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কোনও না কোনওভাবে যোগাযোগ ছিলই। হতে পারে সেটা বিভিন্ন সময় বা পরিস্থিতিতে।
এদিকে গতকাল সন্ধেনাগাদ কোনো রাজনৈতিক ব্যানার ছাড়াই ছাত্রছাত্রীদের একটি সংগঠিত মিছিল মশাল হাতে রাস্তায় নামে। যাদবপুর থেকে গড়িয়াহাট পরিক্রমা করে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
তবে এই মূহুর্তে হয়তো একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ব্যানার আনিস খানের সপক্ষে প্রয়োজন ছিল, যেটা দিতে সমস্ত রাজনৈতিক দলই উৎসাহিত হয়ে উঠেছে। তবে কি দূষিত রাজনৈতিক হাওয়াই আনিসের কাল হয়ে দাঁড়ালো! নাকি বিভিন্ন দলের সাথে সখ্যতার জেরই রূপান্তরিত হলো প্রতিদ্বন্দ্বিতায়? কেননা রাজনীতি কখনোই নিরপেক্ষ হতে পারেনা। এটা সচেতন ব্যক্তিমাত্রেই জানেন।