গতকালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন ইন্ডিয়া গেটের কাছে ৫০ বছর ধরে অনির্বাপিত শিখা ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’-কে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে স্থানান্তর করা হবে। এই ঘোষণা প্রকাশ পেতেই শোরগোল তোলেন বিরোধীরা। প্রশ্ন ওঠে, ঐতিহ্যমন্ডিত ‘শিখা’ নিভিয়ে দেওয়া কি শহীদ স্মারকের প্রতি অপমান নয়?
ইতিহাসের পরিপন্থী বলেও বিষয়টিকে অনেকে দেখছেন। তাঁদের মতে ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের স্মৃতিতে ইন্দিরা গান্ধীর স্থাপিত এই অগ্নিশিখা নেভানো মানে শহীদদেরই অপমান। তার প্রেক্ষিতে বিরোধীদের উদ্দেশ্যে নরেন্দ্র মোদী জানান, এই জ্যোতি-শিখা নেভানোর কথা একবারো বলেনি কেন্দ্র, বলেছে স্থানান্তরের কথা। এই শিখাটি ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালের শিখার সাথে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর সাপেক্ষে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তথ্য তুলে দেখিয়েছেন, ইন্ডিয়া গেটে উল্লিখিত ৯০ হাজার সৈনিকরা কেউই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। বরং ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে সমস্ত বীর শহীদদের স্মৃতিতেই পরবর্তীকালে(২০১৯ সালে) ওয়ার মেমোরিয়ালের প্রতিষ্ঠা। তাই ‘৭১-এর শহীদ যোদ্ধাদের স্মারকশিখা ওয়ার মেমোরিয়ালেই রাখা উচিত হবে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন আধিকারিকরা অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন। প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সঞ্জয় কুলকার্নি বলেন, “অমর জওয়ান জ্যোতি নিভিয়ে দেওয়া হবেনা। সেই আগুন স্থানান্তরিত হবে জাতীয় ওয়ার মেমোরিয়ালে। আমার মনে হয় এতে খারাপের কিছু নেই।” এছাড়াও জেনারেল সতীশ দুয়া, ব্রিগেডিয়ার চিত্রাঞ্জন সাওন্ত, বিনোদ ভাটিয়া সকল প্রাক্তন সেনাকর্তাই স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে।
উল্টোদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে তীব্র বিষোদ্গার করেছেন CPIM নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি সংবাদ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিয়ে জানান, “দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি এত অপদার্থতার অংশীদার হন, তাহলে সত্যিই বিপজ্জনক। কেন সরাতে হবে? দেশরক্ষা বাহিনীর বীরত্বগাথা আমাদের কাছে গর্বের। এই ঘটনায় পরিস্কার, প্রধানমন্ত্রীর না আছে দেশপ্রেমিক মনোভাব, না আছে পরম্পরা সম্পর্কে বোধ!”
পাল্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, “নিভছেনা অমর জওয়ান জ্যোতির শিখা। শুধু এই শিখাকে জাতীয় যুদ্ধের স্মারকের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
বিরোধীদের প্রশ্ন এখানেই। ‘মিশিয়ে দেওয়া’ কথাটির তাৎপর্য প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় স্বচ্ছ নয়। বরং দৃশ্যত ঘটনাটা এমন দেখাচ্ছে যে, ১৯৭২ সালের ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিষ্ঠিত গৌরবময় অধ্যায়কে ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল’-এর সাথে এক করে দেওয়া হচ্ছে। ক্রমাগতই ইতিহাস বদলের কথা বলে চলেছে যেই দল, তারা সুদূর ভবিষ্যতে ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’-র অধ্যায়কেও নিজেদের কৃতিত্ব বলে ইতিহাসের ‘নতুন অধ্যায়’ রূপে দেখাতে চাইবেননা তো? মূল সংশয়টা এখানেই।