প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে অপ্রত্যাশিতভাবে বাংলার ‘নেতাজি সুভাষ’ নামাঙ্কিত ট্যাবলো বাদ যাওয়ার ঘটনায় হতবাক বাংলার মানুষ। তবে কেন্দ্রের এই আচরণের ঠিক বিপরীতে খানিকটা চ্যালেঞ্জের মতো করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন ২৬ জানুয়ারি কলকাতার রেড রোডে ‘নেতাজি’-র ট্যাবলো বের করা হবে।
স্বভাবতই রাজ্যের মানুষের কাছে এই সিদ্ধান্ত যেমন প্রশংসিত হয়েছে, তেমনই কড়া সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। এই সমালোচনার জবাব দিতে গিয়েই বাংলার বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের উদ্দেশ্যে বাঁকা মন্তব্য করে বসলেন, যাতে বাংলায় বিজেপি দলেরই পায়ের মাটি আরো একটু তলতলে হয়ে গেল বলেই একাংশের মত।
একদিকে কেন্দ্র জানায় সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২৬-এর বদলে ২৩ জানুয়ারি থেকেই প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের সূচনা হবে, অন্যদিকে বাংলা থেকে পাঠাতে চাওয়া ‘নেতাজি’ ট্যাবলোই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়! প্রশ্নের মুখে পড়ে কেন্দ্রের সাফাই — অন্যান্য রাজ্যের ট্যাবলো নির্বাচিত হবার ফলেই বাংলার ট্যাবলো বাদ পড়েছে, এটা নিছকই কাকতালীয়।
মানতে নারাজ বঙ্গবাসী। বিশেষ করে এবার যেখানে ‘নেতাজি’-র ওপর ভিত্তি করেই থিম তৈরি হয়েছে, সেখানে বাংলা কীকরে বাদ যায়? এই প্রশ্নে সমালোচনার উত্তরে বিজেপির বঙ্গনেতা দিলীপ ঘোষ উল্টে রাজ্যসরকারকেই দোষারোপ শুরু করেন। কেন্দ্রকে সমর্থন করে বলেন, “বেশ করেছে। ঠিক করেছে। দিল্লীর লোককে এখানে ঢুকতে দেয়না, তাহলে ওরাই বা কেন দেবে?”
সোমবার সংবাদ মাধ্যমে দিলীপ ঘোষ এই প্রতিক্রিয়া দিয়েই বলেছেন, “নেতাজি আছে না কী আছে তা জানিনা, প্রতি বছরই এরাজ্যের ট্যাবলো নিয়ে বিতর্ক হয়। এখন মুখ্যমন্ত্রী চিঠি লিখছেন প্রধানমন্ত্রীকে, আগে কিছু জানাননি কেন? এই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অযোগ্যতার জন্যই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হতাশ হচ্ছেন।”
এরপর সুভাষচন্দ্র বসুর কন্যা অনিতা বসু পাফ ও ভাইপো চন্দ্র বসুর মতামতের প্রসঙ্গ তুলতেই দিলীপ ঘোষ তাঁদের হেলায় উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ওঁরা কি সরকারের অঙ্গ? সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি পদ্ধতি মেনেই কাজ হবে।”
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যে বিতর্ক উঠেছে। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলার মানুষজন। তাঁদের প্রশ্ন, বাঙালি জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কি ‘সরকারি’ সম্পত্তি? না জাতির সম্পদ ! কোনটা? তাহলে সেই নেতার জীবিত আত্মীয় সম্পর্কে দিলীপ ঘোষ এই মন্তব্য করলেন কীকরে? অনেকের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে এই ভেবে — এখনও দিলীপ ঘোষ বিজেপি দলের নেতৃত্ব পদে রয়েছেন কীকরে?
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাংলার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দিল্লীতে না হোক। কলকাতার রেড রোডে ২৬ জানুয়ারি ‘নেতাজির ট্যাবলো’ নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হবে। আজাদ হিন্দ বাহিনী, মৈরাংয়ে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন, রবীন্দ্রনাথের সুভাষ সাক্ষাত — যে বিষয়গুলি কেন্দ্রের ট্যাবলোয় তুলে ধরার কথা ভাবা হয়েছিল, তার যতটা সম্ভব রাখার চেষ্টা করা হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতাজির ভূমিকাই হবে ট্যাবলোর মূল থিম। বাংলার জাতীয় নেতাকে বাংলাই সম্মান সহকারে প্রজাতন্ত্র দিবসে তুলে ধরবে, এটাই মুখ্যমন্ত্রী মমতার চরম সিদ্ধান্ত।