এইমূহুর্তে বাংলার শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবিরা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মরা আরো একবার নিরপেক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। পশ্চিমবঙ্গে ঘটে চলা ধারাবাহিক হিংসাত্মক ঘটনায় প্রশাসনিক গাফিলতির কথা শিষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে শ্রীজাত, পরমব্রত, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, অনুপম রায়, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেন, বোলান গাঙ্গুলী, রূপম ইসলাম সহ মোট ২২ জনের স্বাক্ষর রয়েছে। এঁরা প্রত্যেকেই একমত হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি সম্পূর্ণরূপে আস্থা রেখেও ‘গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে’ সচেতন করাতে চেয়েছেন।
এই তালিকায় উল্লিখিত ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণভাবে শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে মমতা-ঘনিষ্ঠ বলে ধারণা পোষণ করেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। যদিও পরমব্রতর অতীতচারণায় একজন বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিত্বের ছাপই লক্ষ্য করা যায় এবং কবি শ্রীজাত একাধিকবার স্বীকার করেছেন তাঁর কোনও দলীয় মতের প্রতি আনুগত্য নেই। এই চিঠিতেও প্রত্যেকে এই রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার কথাটি উল্লেখ করেছেন।
চিঠির ভাষা অত্যন্ত মার্জিত। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, “বীরভূমের রামপুরহাটে ঘটে যাওয়া কান্ডটিকে যেকোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় পৈশাচিক আখ্যা দেবেন। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। ঘটনা পরবর্তীতে আপনার তত্ত্বাবধানে প্রশাসন, অনুসন্ধান এবং ক্ষতিপূরণ দানে তৎপর হয়েছে এই পদক্ষেপকে নিঃসন্দেহে স্বাগত। কিন্তু তাও প্রশ্ন থেকে যায়, এরকম একটি ঘটনার আগে পুলিশ প্রশাসন তৎপর বা সক্রিয় হলনা কেন?”
চিঠিতে এই প্রশ্নই বড় করে তুলে ধরেছেন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক মহল। পাশাপাশি এটাও বড় করে উল্লিখিত হয়েছে, “ভারতের অধিকাংশ প্রান্তে এইমূহুর্তে গরিষ্ঠতাবাদী বিভাজন সৃষ্টিকারীর আস্ফালন। ২০২১-এ সেই রাজনীতি বাংলায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল। দলমত নির্বিশেষে আমরা মনে করি আপনার জন্যই তা হতে পারেনি। আপনার এই সংগ্রামকে আমরা সম্মান করি।” এই বক্তব্যে গেরুয়া শিবিরের দিকেই স্পষ্টত ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা বাংলার মানুষজন চায়না বলেই মনে করছে শিল্পী ও বুদ্ধিজীবি মহল।
উল্লেখ্য, রামপুরহাটের ঘটনা ছাড়াও পুরনির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঝালদার কংগ্রেস এবং পাণিহাটির তৃণমূল কাউন্সিলরের খুন, ছাত্রনেতা আনিস খান ও তুহিনা খাতুনের হত্যা প্রভৃতি হিংসাত্মক ঘটনার কথাও এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশাসনিক গাফিলতির চিত্র তুলে ধরে সচেতন করে তুলতে চাওয়া হয়েছে। তা নাহলে এই ভুলগুলোই যে বিরুদ্ধ শক্তির রাজনৈতিক অপব্যবহারের সহায়ক হয়ে উঠতে পারে , চিঠিতে সেই চিন্তাও প্রকাশিত হয়েছে।