আশ্রম মানেই আধ্যাত্মিকতা। দেবদ্বিজে ভক্তিসুলভ মানসিতার মানুষের সেখানে নিত্য যাতায়াত, সকাল সন্ধে ঈশ্বরের নামগান। এমনটাই সাধারণত মনে হয়ে থাকে। অনেকে আশ্রম বলতে আশ্রয়স্থলকেও বোঝান। অসহায়, নিপীড়িত, বিতাড়িত মানুষজনের মাথার ওপর একটু ছাদ, দুমুঠো শাকভাতের ব্যবস্থা। অনাথ শিশুদের জন্য অনাথালয়কেও ‘অনাথ আশ্রম’ বলা হয়। কিন্তু কস্মিনকালেও শুনেছেন কি ‘পত্নী পীড়িত পুরুষ আশ্রম’-এর নাম? শুধু নাম নয়, এই আশ্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। কেননা পত্নী দ্বারা নিপীড়িত পুরুষের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়! তাদেরই পরিষেবা দিয়ে চলেছে এই আশ্রম।
মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বম্বে হাইওয়ের ধারে রাজমাতা হোটেলের কাছাকাছি অবস্থিত এই ‘পত্নী পীড়িত পুরুষ আশ্রম।’
বাইরে থেকে কেবল সাইনবোর্ড আর একটা ঘর ছারা বড় কিছু বৈশিষ্ট্য নজরে পড়বেনা। তবে গিন্নির মুখ ঝামটানি বা শ্বশুরকুলের ডমিনেশনে নিত্য ভোগে যেসকল ভারতীয় স্বামী — এই আশ্রম তাদের জন্য সুব্যবস্থা করেছে। হাইওয়ের ধারে অবস্থিত এই আশ্রমে প্রবেশ করলে একটি অফিসঘরে আপনার নাম-ধাম-পরিচয় গ্রহণের পর আশ্রম কর্তৃপক্ষ আপনার সমস্যা, মানে স্ত্রী দ্বারা নিপীড়িত প্রাণীটির (স্বামীর) সমস্যা মনোযোগ সহকারে শুনবেন। প্রয়োজনে সমস্যা সমাধানে নিদান দেবেন।
সমস্যা যদি গভীর হয়, তাহলে অত্যাচারিত স্বামীদের জন্য প্রতিদিন ১০টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত কাউন্সেলিংয়ের সুব্যবস্থাও রয়েছে। সমস্যার তীব্রতা অনুপায়ী ক্যান্ডিডেটদের (পীড়িত স্বামী) তিনটি গ্রেডে ভাগে করা হয়েছে। যথাক্রমে, স্ত্রী বা শ্বশুরবাড়ির দ্বারা অতিরিক্ত অত্যাচারিত স্বামী A গ্রেড, স্ত্রী যদি দুনিয়ার বায়নাক্কা জোর করে আপনার ঘাড়ে চাপাতে চান এবং ঝগড়া পর্যন্ত ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ রাখেন তাহলে B গ্রেড এবং তুলনায় কম উত্যক্ত স্বামীরা C গ্রেডের আওতায় পড়েন। তাদের প্রতি সমাধানসূত্রও সেই অনুসারে নির্ধারিত হয়।
এছাড়াও প্রতিদিন আশ্রমের ভিজিটর-স্বামীদের নিয়ে পূজোপাঠ অনুষ্ঠান ও খিচুড়ি ভোগও খাওয়ানো হয়। ইতিমধ্যেই ওয়ালুজ-এর কাছে বম্বে হাইরোডের ধারে এই ‘পীড়িত পুরুষ আশ্রম’ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ নিপীড়িত স্বামী এই আশ্রমের পরামর্শে দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। আপনিও যাবেন ভাবছেন কি?