রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা এখন পলিটিক্যাল ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার নিদর্শন বাংলার মানুষ হামেশাই লক্ষ্য করছেন। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে, প্রান্তিক এলাকায় এই হিংসার প্রকাশ কিছু বেশি বলেই অনেকে মনে করেন। এই রীতি অনুসরণ করেই বনগাঁর এক বিজেপি নেতা প্রকাশ্য সভায় আস্ফালন দেখিয়ে তৃণমূল দলটাকেই ‘এনকাউন্টারের’ হুমকি ছুঁড়লেন।
তিনি দক্ষিণ বনগাঁর বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার। তৃণমূল সরকারের শাসনকে ‘তালিবানি শাসন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। চাঁদাপাড়ার পথ অবরোধ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি প্রকাশ্যেই বললেন, “বর্তমানে যাঁরা তৃণমূলের উচ্চ নেতৃত্ব, তাঁদের বলছি আগামী শান্তিপূর্ণ বনগাঁকে অশান্ত করার চেষ্টা করবেননা। যারা এই তালিবানি শাসনে বিশ্বাসী, আগামী দিনে এই পুলিশ দিয়েই এনকাউন্টার করাবো আমরা।”
বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদারের অভিযোগ অনুযায়ী, মঙ্গলবার কল্যাণীতে বিজেপির একটি সভা চলাকালীন স্থানীয় সংগঠক রামপদ দাসের ওপর তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদেই স্বপন মজুমদারের নেতৃত্বে যশোর রোডে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি নিয়েছেন বিজেপি নেতারা।
এই সভায় তৃণমূলের ওপর অভিযোগ তুলে বক্তা স্বপন মজুমদার বলেন, “গয়েশপুর পার্টি অফিসে একটি ঘরোয়া বৈঠকে গেছিলেন জেলা সভাপতি রামপদ দাস। বৈঠক চলাকালীনই তৃণমূলের হার্মাদবাহিনী সেখানে চড়াও হয়, গাড়ি ভাঙচুর করে। পার্টিঅফিস লক্ষ্য করে ইঁটপাটকেল ছুঁড়ে মারে। যাতে গুরুতর আহত হয়েছেন রামপদ দাস।”
এমনকি পুলিশের সামনে পর্যন্ত বিজেপি কর্মীদের মারধোর করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি কর্মীরা থানায় গিয়ে ‘প্রতীকী’ বিক্ষোভ দেখাতে গেলে কল্যােণী থানার আইসি বিজেপির মহিলা সংগঠকের শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেন।
ঘটনার উল্লেখ করে স্বপন মজুমদারের বক্তব্য, “এই ধরনের দলদাস পুলিশ বাংলার জন্য ক্ষতিকর ও নিন্দাদায়ক। এমন যদি চলতে থাকে, তবে আগামী দিন ভয়াবহ হতে পারে।”
এর প্রতিষেধক হিসেবেই, বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই পুলিশকে কাজে লাগিয়েই তৃণমূলকে ‘এনকাউন্টারের’ হুমকি দিলেন তিনি! কথা হল, দুষ্কৃতি যে দলেরই হোক, হিংসার বিরুদ্ধে শাস্তি অবশ্যই প্রাপ্য। তবে যেধরনের ভাষা ও সংস্কৃতির ছাপ বিজেপি নেতা স্বপন মজুমদারের এই বক্তব্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের সন্ত্রাসী মনোভাব স্পষ্ট প্রতিফলিত। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় দলাদলি ও কোন্দলের জন্য দলের ‘উচ্চনেতৃত্ব’-কে দায়ী করা যায় কিনা সে প্রশ্নই অনেকে করছেন।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সেই পুলিশকে দিয়েই এনকাউন্টার করানোর মন্তব্যের নামই কি ‘শান্ত প্রতিবাদ?’
এর উত্তর খুঁজতে রাজনৈতিক অভিধান হাতড়ানো ছাড়া উপায় নেই।