নন্দীগ্রাম কান্ড। যা ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সময়ের নিয়মে, সেই কান্ডই আবার উঠে এল আলোচনায়। নন্দীগ্রামে জমি দিতে অনিচ্ছুক আন্দোলনকারী কৃষকদের ওপর পুলিশ বাহিনীর গুলি চালানোর যে নারকীয় কান্ড ঘটেছিল তার একমাত্র নায়ক ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ভট্টাচার্য, এটা প্রায় সব পশ্চিমবঙ্গবাসীই জানেন।
২০১১ সালে ৩৪ বছরের বামরাজত্ব থেকে সিংহাসন চ্যুত হওয়ার মূলেই ছিল সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম। এবার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে সকলেরই মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছেন আইপিএস ও ইন্টালিজেন্স শাখার প্রাক্তন অফিসার দিলীপ মিত্র। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, ” নন্দীগ্রামে পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এটা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘটানো হয়!”
রাজনীতি থেকে প্রায় সরে দাঁড়ানো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্প্রতি আলোচনার শিরোনামে উঠে এসেছেন। রীতিমতো সকলকে অবাক করে এইবছর তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ দিতে চেয়েছিল বিজেপি সরকার। মতাদর্শগত কারণে যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কিন্তু প্রত্যাখ্যানেই আলোচনা থেমে যায়নি। রাজনৈতিক মহলে ক্রমাগত চাপান উতোর চলছিলই, তবে কি তবে এর মাধ্যমে বিজেপি জানান দিতে চায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শাসক হিসেবে তারা সমর্থন করে? এই নিয়েই যখন গুঞ্জন চলছে, ঠিক তখনই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ইমেজ ক্লিন করতে হাজির হলেন এক প্রাক্তন আইপিএস অফিসার! তাঁর এই মন্তব্যে শোরগোল উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
প্রাক্তন অফিসার দিলীপ মিত্র বলেছেন, “হোম সেক্রেটারি, চিফ সেক্রেটারি বারবার বলেছিল পুলিশ অ্যাকশন নেবেনা। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, জমি অধিগ্রহণ অসম্ভব। এক রাজনৈতিক ব্যক্তি ও আইবি অফিসার চিফ মিনিস্টারকে কনভিন্সিং করানোর জন্য ষড়যন্ত্র করে অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট তৈরি করে।”
কে সেই রাজনৈতিক ব্যক্তি! তা অবশ্য বিস্তারিত জানা যায়নি। ২০২১ সালে যখন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে, সেইসময় বুদ্ধদেববাবু তাঁর বিবৃতিতে বলেছিলেন, “সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে এখন শ্মশানের নীরবতা। সেসময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে বাংলার যুবসমাজ।”
এখন প্রশ্ন হল, সেই কুটিল চক্রান্তকারীদের একপক্ষ তাঁকে হঠাৎ পদ্মভূষণ দিতে আগ্রহী হয়ে উঠল কেন? আর কেনই বা ঠিক সেই মূহুর্তেই নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ইমেজে ইরেজার ঘষতে শুরু করলেন? যদি সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকেই, খোলাখুলি তা প্রকাশ করা হলনা কেন? বুদ্ধদেববাবুর তৎকালীন ভাষণের একাধিক আস্ফালন চিত্র পশ্চিমবঙ্গবাসী লাইভ দেখেছেন সেসময়ে। তাই প্রশ্নগুলো স্বাভাবিকভাবেই জনমানসে ঘুরছে।