তিনি স্কুলশিক্ষিকা। জানতে পারেন তাঁরই স্কুলের ক্লাস ফাইভের একটি মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে নিজের ছেলে। ছেলেটি ক্লাস টেন, প্রেমের ক্ষেত্রে একেবারে নাছোড় গান্ধীবাদি–করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে স্লোগানে বিশ্বাসী। বাধ্য হয়েই মেয়েটির সাথে ছেলের বিয়ে দিলেন মা! আর তারপরেই কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে নেটদুনিয়া এই শিক্ষিকার প্রবল সমালোচনায় তোলপাড়।
যুগে যুগে রীতি বদলায়। এই রীতি নির্ভর করে একটি সমাজ কোন সময় ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতির ওপর দিয়ে চলেছে। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও একটা সময়ে বাংলার অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তিও বাল্যবিবাহ সমর্থন করতেন।
তাঁদের ধারণায় ছিল, ১৬ বছরের পর বিয়ে না দিলে ছেলে বিপথগামী হবে। বিষয়টা বয়ঃস্বন্ধিকালের সংকট বিচার করলে খাপে খাপ মিলে যাবে। অবশ্য মেয়েটি যে বিবাহযোগ্যা হয়নি, এদিকটা তাঁরা ভুলেও ভেবে দেখতেননা। একটু যারা অভিজাত গোত্রের ছিলেন, তাঁরা খানিক সচেতন ছিলেন, বিয়ে দিয়ে মেয়েকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন, ছেলেকে পড়তে পাঠাতেন পশ্চিমে। বাকি বছরগুলো স্ত্রী এবং স্বামীটি প্রাপ্তবয়স্ক হবার অপেক্ষায় প্রহর গুনতো আর রোম্যান্টিক চিঠির আদানপ্রদান করত। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে এই ছবি আমরা দেখতে পাই।
এটা ২০২২ সাল। প্রাপ্তবয়স্ক তো দূর, তেত্রিশবছর পার করেও বিয়েতে জড়াবে কিনা ছেলে-মেয়ে ভেবে আকূল হয়। অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে ধড়াম করে প্রেমে পড়ে ‘কুল’ মনোভাব নিয়ে অভিভাবককে থ্রেট দেওয়ার হুমকিও ঘটে। যেমন ঘটেছে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গায়।
মায়ের স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকেই সে লাইফ পার্টনার হিসেবে বেছে নিতে মরিয়া। মা তাঁর ছেলেকে বহুপ্রকারে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। বোঝান আগে লাইফ তৈরি হোক, তারপর পার্টনারের চিন্তা। কিন্তু ছেলে নাছোড়! খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে আজ মরবো কাল মরবো দশা। একেবারে লাগাতার অনশন। এই অনশন ভঙ্গ করতেই লুকিয়ে মেয়েটির সাথে ছেলের বিয়ে দিয়ে দেন মা।
একে তিনি শিক্ষিকা, তাই সমালোচনার তীরে বিষ মাখানো হয় মাখনের মতো। জানা গিয়েছে, ভদ্রমহিলা তাঁর শিক্ষিকার চাকরিটি খুইয়েছেন। ইউএনও শামীম ভুঁঞার নির্দেশে চুয়াডাঙ্গা উপজেলার শিক্ষাকর্তা উত্তমকুমার কুন্ডু ওই শিক্ষিকার চাকরির মুন্ডু কেটেছেন। শিক্ষিকাও সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করে থম মেরে গিয়েছেন। বিয়ে তো দূর, ছেলেটির তো এখনও রোজগারের বয়সও হয়নি! আর ক্লাস ফাইভের ছাত্রী বৌমাটি? তার কথা নাহয় থাক।